Cancer, Tumors & Cysts: ক্যান্সার, টিউমার ও সিস্ট রোগ, রোগ পরিচিতি

লিভারের ক্যান্সার এর সাইড ইফেক্ট মুক্ত চিকিৎসা ও বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি

লিভার

মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে লিভার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন থেকে শুরু করে বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন লিভারে ক্যান্সার (Liver Cancer) হয়, তখন এই অঙ্গটির কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিভারের ক্যান্সার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সমস্যার একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। এটি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে এবং বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এই ব্লগে আমরা লিভারের ক্যান্সার কী, কেন হয়, এর প্রকারভেদ এবং এর থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

English Post

সূচীপত্র

লিভারের ক্যান্সার কি?
লিভারের ক্যান্সার কিভাবে হয়?
লিভারের ক্যান্সার কত প্রকার ও কি কি?
লিভারের ক্যান্সার হওয়ার কারণসমূহ কি?
লিভারের ক্যান্সার রোগের লক্ষণসমূহ
লিভারের ক্যান্সার রোগের ক্রম বিকাশ
লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি?
লিভারের ক্যান্সার হলে করনীয় ও বর্জনীয়
লিভারের ক্যান্সার রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়?
লিভারের ক্যান্সার রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে?
লিভারের ক্যান্সার রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না
লিভারের ক্যান্সার রোগের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি
লিভারের ক্যান্সার রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা
লিভারের ক্যান্সার রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
লিভারের ক্যান্সার রোগের ভেষজ চিকিৎসা
লিভারের ক্যান্সার রোগীদে রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ কেমন হবে?
লিভারের ক্যান্সার রোগীদে স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান কেমন হবে?
লিভারের ক্যান্সার অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক ও অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা কেমন হবে ?
লিভারের ক্যান্সার রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক

নিন্মোক্ত ইউটিউব প্লেলিস্টে লিভারের ক্যান্সার সহ কতিপয় ক্যান্সার, টিউমার ও সিস্ট রোগের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেওয় আছে

লিভারের ক্যান্সার কি? What is Liver Cancer?

লিভারের ক্যান্সার হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে টিউমার সৃষ্টি করে। এটি দুই ধরনের হতে পারে – প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার (যা সরাসরি লিভার থেকে শুরু হয়) এবং সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার (যা শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে লিভারে ছড়িয়ে পড়ে)।

লিভারের ক্যান্সার কিভাবে হয়? How does Liver Cancer happen?

  1. কোষের জিনগত পরিবর্তন:
    লিভারের কোষের ডিএনএ-তে মিউটেশন (জিনগত পরিবর্তন) হলে কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভক্ত হতে শুরু করে। এর ফলে টিউমার তৈরি হয়, যা ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
  2. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ:
    হেপাটাইটিস বি বা সি সংক্রমণ এবং লিভার সিরোসিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী লিভার প্রদাহ লিভারের কোষের ক্ষতি করে। এই কোষগুলি ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।
  3. লিভার টিস্যুর ক্ষতি ও পুনরুজ্জীবন:
    লিভারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি বা প্রদাহ হলে কোষগুলি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সময় জিনগত ত্রুটি সৃষ্টি হতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. টক্সিনের প্রভাব:
    খাদ্যের মাধ্যমে ছত্রাকজাতীয় টক্সিন (অফ্লাটক্সিন), অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, এবং রাসায়নিকের প্রভাবে লিভারের কোষ ধ্বংস হতে পারে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

লিভারের ক্যান্সার কত প্রকার ও কি কি? How many types of Liver Cancer are there?

লিভারের ক্যান্সার প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

  1. হেপাটোস্যুলুলার কারসিনোমা (Hepatocellular Carcinoma – HCC): এটি প্রাইমারি লিভার ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরন। এটি সরাসরি লিভারের কোষ থেকে শুরু হয়।
  2. কোলানজিওকারসিনোমা (Cholangiocarcinoma): এটি লিভারের বাইল ডাক্ট থেকে শুরু হয় এবং অপেক্ষাকৃত বিরল।

লিভারের ক্যান্সার হওয়ার কারণসমূহ কি? What are the causes of Liver Cancer?

লিভারের ক্যান্সারের পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো:

  1. হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ (Hepatitis B and C): দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সংক্রমণ লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis): অতিরিক্ত মদ্যপান বা দীর্ঘস্থায়ী লিভার সংক্রমণ সিরোসিসের কারণ হয়ে লিভারের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
  3. অতিরিক্ত ফ্যাট জমে থাকা (Fatty Liver Disease): নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. অ্যালকোহল এবং ধূমপান (Alcohol and Smoking): দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ ও ধূমপানের ফলে লিভারের ক্যান্সার হতে পারে।
  5. জেনেটিক ফ্যাক্টর (Genetic Factors): পারিবারিক ইতিহাস থাকলে লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।

লিভারের ক্যান্সার রোগের লক্ষণসমূহ Symptoms of Liver Cancer

লিভারের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  1. ডান পেটের ব্যথা: পেটের ডান পাশে ক্রমাগত ব্যথা হতে পারে।
  2. অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া: কোনো কারণ ছাড়াই ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে।
  3. ক্ষুধামন্দা ও বমি বমি ভাব: খাবারে অরুচি এবং প্রায়ই বমি হওয়ার অনুভূতি।
  4. জন্ডিস: চোখ এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া।
  5. শরীর দুর্বল হওয়া: অতিরিক্ত ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা অনুভব করা।
  6. পেট ফুলে যাওয়া: অ্যাসাইটিসের (পেটে পানি জমা) কারণে পেট ফুলে উঠতে পারে।
  7. ত্বকে চুলকানি: রক্তে বাইল লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকে চুলকানি হতে পারে।

লিভারের ক্যান্সার রোগের ক্রম বিকাশ Progression of Liver Cancer

লিভারের ক্যান্সার ধীরে ধীরে কয়েকটি ধাপে বিকাশ লাভ করে:

  1. লিভারের কোষের ক্ষতি: দীর্ঘস্থায়ী লিভার ইনফেকশন বা ক্ষতির কারণে কোষগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যায়।
  2. টিউমার তৈরি: অস্বাভাবিক কোষগুলো একত্রিত হয়ে টিউমারের সৃষ্টি করে।
  3. লোকাল ইনভেশন: টিউমার লিভারের কাছাকাছি অন্যান্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে।
  4. মেটাস্টাসিস: ক্যান্সার শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন ফুসফুস বা হাড়।

লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি? What is the risk of Liver Cancer and Rix factor? 

লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ: দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস ইনফেকশন লিভারকে দুর্বল করে।
  2. লিভার সিরোসিস: দীর্ঘদিন মদ্যপান বা লিভারের প্রদাহ সিরোসিসের কারণ হতে পারে।
  3. স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন লিভারের ওপর চাপ ফেলে এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. অ্যালকোহল এবং ধূমপান: অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান লিভার কোষের ক্ষতি করে।
  5. পারিবারিক ইতিহাস: লিভারের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
  6. অফ্লাটক্সিন: ফাঙ্গাসযুক্ত খাবারে উপস্থিত এই টক্সিন লিভারের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।

লিভারের ক্যান্সার হলে করনীয় ও বর্জনীয় What to do and avoid if you have Liver Cancer

করণীয়:

  1. টিকা গ্রহণ করুন: হেপাটাইটিস বি ও সি প্রতিরোধে টিকা নিন।
  2. পুষ্টিকর খাদ্য খান: তাজা ফল, সবজি, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান।
  3. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন: স্থূলতা এড়িয়ে চলুন।
  4. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: লিভার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  5. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

বর্জনীয়:

  1. অ্যালকোহল ও ধূমপান: অ্যালকোহল এবং তামাকজাত দ্রব্য সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
  2. অস্বাস্থ্যকর খাবার: ফাস্টফুড বা প্রসেসড খাবার বর্জন করুন।
  3. অফ্লাটক্সিনযুক্ত খাবার: পুরনো এবং ফাঙ্গাসযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন।
  4. অতিরিক্ত ওষুধ: লিভারের ওপর চাপ পড়ে এমন ওষুধ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
  5. অলস জীবনযাপন: সক্রিয় থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

লিভারের ক্যান্সার রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়? What lab tests are required to diagnose Liver Cancer?

লিভারের ক্যান্সার নির্ণয়ে কিছু বিশেষ ল্যাব টেস্ট এবং স্ক্যান করানো হয়। এসব টেস্ট ক্যান্সার নিশ্চিতকরণ, রোগের স্তর নির্ধারণ এবং লিভারের বর্তমান অবস্থা বোঝার জন্য জরুরি। নিচে প্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্টগুলো উল্লেখ করা হলো:

  1. অ্যালফা-ফিটোপ্রোটিন (AFP) টেস্ট:
    • এটি একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে করা হয়।
    • লিভারের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রক্তে অ্যালফা-ফিটোপ্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
    • বিশেষ করে হেপাটোস্যুলুলার কারসিনোমা (Hepatocellular Carcinoma) শনাক্ত করতে কার্যকর।
  2. লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT):
    • লিভারের কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য এই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।
    • বিলিরুবিন, অ্যালবুমিন, এবং এনজাইম লেভেল (AST, ALT) পরিমাপ করা হয়।
  3. হেপাটাইটিস বি এবং সি টেস্ট:
    • হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস সংক্রমণ লিভারের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
    • রক্ত পরীক্ষা করে এই ভাইরাসগুলোর উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।
  4. ব্লাড কাউন্ট (CBC):
    • রক্তের বিভিন্ন উপাদান যেমন হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেট এবং শ্বেত রক্তকণিকা পরীক্ষা করা হয়।
    • ক্যান্সারের ফলে রক্তে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এই টেস্ট তা শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
  5. ইমেজিং টেস্ট (Imaging Tests):
    • আলট্রাসাউন্ড (Ultrasound): লিভারে টিউমার আছে কিনা তা প্রাথমিকভাবে দেখার জন্য।
    • সিটি স্ক্যান (CT Scan): লিভারের ভেতরের বিস্তারিত ছবি নেওয়া হয়।
    • এমআরআই (MRI): লিভারের গঠন এবং টিউমারের আকার ও অবস্থান স্পষ্টভাবে দেখার জন্য।
  6. বায়োপসি (Biopsy):
    • লিভারের টিস্যু নিয়ে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়।
    • এটি নিশ্চিত করে যে টিউমারটি ক্যান্সার কিনা এবং তার ধরন কী।
  7. কোয়াগুলেশন টেস্ট:
    • লিভারের কাজের সাথে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি যুক্ত।
    • রক্ত জমাট বাঁধার সময় নির্ধারণ করতে এই টেস্ট করা হয়।

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে? What lifestyle should Liver Cancer patients follow?

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের জীবনধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। সঠিক জীবনধারা লিভারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

  1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শরীরকে বিশ্রাম দিন এবং অতিরিক্ত শারীরিক কাজ এড়িয়ে চলুন।
  2. হালকা ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটার মতো শারীরিক কার্যক্রম করুন।
  3. স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপ লিভারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। মেডিটেশন এবং গভীর শ্বাসের অনুশীলন উপকারী।
  4. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: দেহ থেকে টক্সিন দূর করতে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  5. পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন: লিভার সংক্রমণ এড়াতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

লিভারের ক্যান্সার রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না What should Liver Cancer patients eat and avoid?

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের এমন খাবার খেতে হবে যা লিভারের ওপর চাপ কমায় এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।

  1. ফল ও শাকসবজি: ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল (যেমন পেঁপে, আপেল, বেরি) এবং শাকসবজি (যেমন পালং শাক, ব্রকলি) বেশি খান।
  2. চর্বি-কম প্রোটিন: মাছ, ডাল, এবং চর্বিহীন মুরগির মাংস লিভারের জন্য উপকারী।
  3. সম্পূর্ণ শস্য: ওটস, ব্রাউন রাইস, এবং পুরো গমের রুটি খাওয়া উচিত।
  4. স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, অলিভ অয়েল, এবং অ্যাভোকাডো থেকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট নিন।
  5. দই এবং প্রোবায়োটিক খাবার: হজম শক্তি বাড়াতে প্রোবায়োটিক খাবার, যেমন দই, কার্যকর।
  6. প্রাকৃতিক হারবাল চা: গ্রিন টি এবং ক্যামোমাইল চা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রাখে।

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের কিছু খাবার এবং পানীয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  1. অ্যালকোহল: অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি বাড়িয়ে দেয়।
  2. প্রসেসড এবং ফাস্ট ফুড: উচ্চ চর্বিযুক্ত এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন।
  3. অতিরিক্ত লবণ: অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায় এবং লিভারের কার্যক্ষমতা কমায়।
  4. চিনি এবং মিষ্টি: চিনি লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমাতে পারে।
  5. ফ্রায়েড খাবার: ভাজার সময় ব্যবহৃত তেল লিভারের ওপর চাপ ফেলে।
  6. কৃত্রিম সংরক্ষণযুক্ত খাবার: কৃত্রিম সংরক্ষণ ও রঙযুক্ত খাবার লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
  7. অফ্লাটক্সিন যুক্ত খাবার: ফাঙ্গাসযুক্ত বাদাম বা দানাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।

লিভারের ক্যান্সার রোগের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি Exercise and therapy for Liver Cancer

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের জন্য হালকা ব্যায়াম শরীরকে শক্তিশালী রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তবে যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিচে লিভারের ক্যান্সার রোগীদের জন্য কিছু হালকা ব্যায়ামের উদাহরণ দেওয়া হলো:

  1. হালকা হাঁটা:
    • প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ধীর গতিতে হাঁটা রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে এবং ক্লান্তি কমায়।
  2. যোগব্যায়াম (Yoga):
    • সহজ আসন যেমন তাড়াসন, ভ্রৃক্ষাসন এবং প্রণায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে শিথিল করতে কার্যকর।
    • যোগব্যায়াম লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  3. স্ট্রেচিং:
    • পেশি নমনীয় রাখতে এবং শরীরের ভারসাম্য উন্নত করতে হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম করুন।
  4. ডিপ ব্রিদিং (Deep Breathing):
    • গভীর শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ বাড়ে এবং শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার হয়।
  5. হালকা শক্তি অনুশীলন (Light Strength Training):
    • ছোট হ্যান্ড ওয়েট বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করে হালকা শক্তি অনুশীলন করুন। এটি পেশির শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

লিভারের ক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু থেরাপি রোগীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।

  1. ফিজিক্যাল থেরাপি (Physical Therapy):
    • অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার পর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ফিজিক্যাল থেরাপি কার্যকর।
    • এটি পেশির শক্তি এবং নড়াচড়ার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
  2. অকুপেশনাল থেরাপি (Occupational Therapy):
    • দৈনন্দিন কাজ সহজ করার জন্য থেরাপি দেওয়া হয়। এটি রোগীকে আত্মনির্ভরশীল হতে সহায়তা করে।
  3. ম্যাসাজ থেরাপি (Massage Therapy):
    • পেশি শিথিল করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে হালকা ম্যাসাজ কার্যকর হতে পারে।
    • তবে লিভারের অবস্থা বিবেচনা করে ম্যাসাজ থেরাপিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
  4. আর্ট থেরাপি (Art Therapy):
    • মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আর্ট থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি মানসিক চাপ কমায়।
  5. প্যালিয়েটিভ কেয়ার (Palliative Care):
    • রোগের উন্নতি বা যন্ত্রণা কমাতে বিশেষায়িত কেয়ার প্রোগ্রাম। এটি রোগীর জীবনমান উন্নত করতে সাহায্য করে।

লিভারের ক্যান্সার রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা Allopathic treatment for Liver Cancer

লিভারের ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের পর্যায়, ক্যান্সারের প্রকার, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য মেডিকেল পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ঠিক করা হয়। এলোপ্যাথি চিকিৎসা সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়:

  1. অস্ত্রোপচার (Surgery):
    • লিভার রিসেকশন (Liver Resection): লিভারের আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়।
    • লিভার ট্রান্সপ্লান্ট (Liver Transplant): পুরো লিভারটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে নতুন একটি লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়।
  2. লোকাল থেরাপি (Local Therapy):
    • অ্যাবলেশন থেরাপি (Ablation Therapy): রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে টিউমার ধ্বংস করা হয়।
    • এমবোলাইজেশন (Embolization): রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করা হয়। এটি দুই ধরনের হতে পারে:
      • ট্রান্সআর্টেরিয়াল এমবোলাইজেশন (TAE)।
      • ট্রান্সআর্টেরিয়াল কেমোএমবোলাইজেশন (TACE)।
  3. রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy):
    • উচ্চ শক্তিসম্পন্ন এক্স-রে বা প্রোটন ব্যবহার করে টিউমার ধ্বংস করা হয়।
    • স্টেরিওট্যাকটিক বডি রেডিয়েশন থেরাপি (SBRT) লিভারের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  4. কেমোথেরাপি (Chemotherapy):
    • ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
    • এটি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পুরো শরীরে কাজ করে।
  5. টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy):
    • নির্দিষ্ট প্রোটিন বা জিন লক্ষ্য করে কাজ করা ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
    • উদাহরণ: সরাফেনিব (Sorafenib), যা হেপাটোস্যুলুলার কারসিনোমার ক্ষেত্রে কার্যকর।
  6. ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy):
    • রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
    • উদাহরণ: অ্যাটেজোলিজুম্যাব (Atezolizumab) এবং বেভাসিজুম্যাব (Bevacizumab)।
  7. প্যালিয়েটিভ কেয়ার (Palliative Care):
    • রোগীর যন্ত্রণা কমানোর জন্য ওষুধ এবং থেরাপি প্রদান করা হয়।
    • এটি রোগীর জীবনমান উন্নত করে।

লিভারের ক্যান্সার রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা Homeopathic treatment for Liver Cancer

লিভারের ক্যান্সার একটি জটিল এবং গুরুতর রোগ। এলোপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রোগীর যন্ত্রণা কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। নিচে লিভারের ক্যান্সারের জন্য ব্যবহৃত কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের নাম দেওয়া হলো:

  1. কার্সিনোসিন (Carcinosin):
    • এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যবহার করা হয়।
    • বিশেষত যখন রোগীর ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে।
  2. চেলিডোনিয়াম মেজর (Chelidonium Majus):
    • লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং জন্ডিসের মতো উপসর্গ কমাতে সহায়ক।
    • এটি ডান পেটে ব্যথা এবং লিভারের প্রদাহের জন্য কার্যকর।
  3. ফসফরাস (Phosphorus):
    • লিভার থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এবং দুর্বলতা কমাতে ব্যবহার করা হয়।
    • এটি রোগীর ক্লান্তি ও অরুচি দূর করতে সহায়ক।
  4. লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium):
    • লিভারের টিউমার এবং পেট ফোলাভাব কমাতে কার্যকর।
    • বদহজম ও গ্যাসের জন্যও এটি ব্যবহৃত হয়।
  5. আর্সেনিকাম অ্যালবাম (Arsenicum Album):
    • রোগীর উদ্বেগ, দুর্বলতা এবং ওজন হ্রাস কমাতে সহায়ক।
    • এটি লিভারের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  6. নাট্রাম সালফ (Natrum Sulphuricum):
    • লিভার ডিটক্সিফিকেশন এবং ফ্যাটি লিভারের সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
  7. ক্যালকারিয়া কার্ব (Calcarea Carbonica):
    • লিভারের টিউমার এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে সহায়ক।

লিভারের ক্যান্সার রোগের ভেষজ চিকিৎসা Herbal treatment for Liver Cancer

লিভারের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ভেষজ পদ্ধতি মূলত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি লিভারের কার্যকারিতা বজায় রাখা, রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে ভেষজ চিকিৎসা কখনোই এলোপ্যাথিক চিকিৎসার বিকল্প নয়। নিচে লিভারের ক্যান্সারের জন্য কার্যকর কিছু ভেষজ উপাদানের তালিকা দেওয়া হলো:

  1. দুধ থিসল (Milk Thistle):
    • দুধ থিসল লিভার ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে পারে।
    • এতে থাকা সিলিমারিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান লিভারের সুরক্ষায় কার্যকর।
  2. আয়ুর্বেদিক হালদি (Turmeric):
    • হালদিতে উপস্থিত কারকুমিন (Curcumin) লিভারের প্রদাহ কমায় এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
    • এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  3. গ্রীন টি (Green Tea):
    • গ্রীন টিতে থাকা ক্যাটেচিনস (Catechins) লিভারের টিস্যু রক্ষা করতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
    • এটি টক্সিন অপসারণে কার্যকর।
  4. কালোজিরা তেল (Black Seed Oil):
    • কালোজিরায় থাকা থাইমোকুইনোন লিভার কোষের পুনর্জন্মে সহায়ক এবং টিউমার সেল ধ্বংসে ভূমিকা রাখে।
  5. ভেষজ গন্ধরাজ (Andrographis Paniculata):
    • এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে কার্যকর।
  6. আয়ুর্বেদিক গিলয় (Giloy):
    • এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং লিভার ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।
  7. আলভার জুস (Aloe Vera Juice):
    • লিভারের সুরক্ষায় এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি হজম প্রক্রিয়াও উন্নত করে।
  8. অশ্বগন্ধা (Ashwagandha):
    • এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে শক্তি দিতে কার্যকর।

সতর্কতা:

  • ভেষজ চিকিৎসা গ্রহণের আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • ভেষজ উপাদান ব্যবহারে ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ কেমন হবে? What will be the cooking materials and environment in patients with Liver Cancer?

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের জন্য রান্না করার উপকরণ এবং পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করতে হবে যা স্বাস্থ্যকর এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপযোগী। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

রান্নার উপকরণ (Cooking Ingredients):

  1. কম তেল:
    • রান্নায় খুব সামান্য তেল ব্যবহার করুন। স্বাস্থ্যকর তেল যেমন অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
    • অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার লিভারের উপর চাপ ফেলে।
  2. তাজা শাকসবজি এবং ফল:
    • ফরমালিনমুক্ত ও তাজা সবজি ও ফল ব্যবহার করুন।
    • শাকসবজি যেমন ব্রকলি, পালং শাক, এবং ফল যেমন পেঁপে, আপেল রান্নায় বা খাবারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করুন।
  3. চর্বিহীন প্রোটিন:
    • মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), মাছ, ডাল এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করুন।
    • লাল মাংস বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলুন।
  4. কম লবণ ও কম চিনি:
    • রান্নায় অল্প লবণ ব্যবহার করুন এবং চিনি যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন।
    • লবণ অতিরিক্ত হলে লিভারের প্রদাহ বাড়তে পারে।
  5. সম্পূর্ণ শস্য:
    • ব্রাউন রাইস, ওটস, এবং পুরো গমের রুটি ব্যবহার করুন।
    • রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা চাল বা সাদা আটা এড়িয়ে চলুন।
  6. প্রাকৃতিক মশলা:
    • হলুদ, আদা, রসুন ইত্যাদি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি মশলা ব্যবহার করুন।
    • কৃত্রিম মশলা এড়িয়ে চলুন।
  7. ক্যামিকেল-মুক্ত পানি:
    • রান্নার জন্য বিশুদ্ধ এবং ফিল্টারকৃত পানি ব্যবহার করুন।

রান্নার পরিবেশ (Cooking Environment):

  1. পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর রান্নাঘর:
    • রান্নাঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
    • দূষণমুক্ত এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
  2. ভেন্টিলেশন:
    • রান্নার সময় রান্নাঘরে সঠিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। ধোঁয়া এবং তাপ থেকে রোগীকে দূরে রাখুন।
  3. ফ্রেশ কুকিং:
    • রান্নার পরে খাবার বেশি সময় রেখে খাবেন না। টাটকা রান্না করা খাবারই উপযুক্ত।
  4. বিষাক্ত পাত্র এড়িয়ে চলুন:
    • অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র বা নন-স্টিক পাত্র এড়িয়ে চলুন। স্টেইনলেস স্টিল বা কাঁচের পাত্র ব্যবহার করুন।
  5. নিরাপদ স্টোরেজ:
    • রান্নার উপকরণ যেমন সবজি, মশলা, এবং মাছ-মাংস সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন।

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান কেমন হবে? How about skin creams, lotions, oils and soaps for Liver Cancer patients?

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের ত্বক সাধারণত অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, বিশেষ করে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির পরে। সঠিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার রোগীর ত্বকের স্বস্তি বজায় রাখতে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।

স্কিন ক্রিম ও লোশন (Skin Creams and Lotions):

  1. অ্যালো ভেরা ভিত্তিক ক্রিম:
    • ত্বকের শুষ্কতা এবং জ্বালাপোড়া কমাতে অ্যালো ভেরা জেল সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করুন।
    • এটি ত্বককে শীতল ও মসৃণ রাখে।
  2. হাইপোঅ্যালার্জেনিক লোশন:
    • এমন লোশন ব্যবহার করুন যা সুগন্ধি এবং রাসায়নিক মুক্ত।
    • শিয়া বাটার, কোকো বাটার বা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ লোশন ভালো।
  3. সানস্ক্রিন লোশন:
    • এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করবে।
  4. সোডিয়াম ল্যাকটেট বা ইউরিয়া সমৃদ্ধ ক্রিম:
    • ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা কমাতে ইউরিয়া বা সোডিয়াম ল্যাকটেট যুক্ত ক্রিম কার্যকর।

তেল (Oils):

  1. নারকেল তেল (Coconut Oil):
    • প্রাকৃতিক নারকেল তেল ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
    • এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং ত্বককে মসৃণ রাখে।
  2. জোজোবা তেল (Jojoba Oil):
    • এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধে কার্যকর।
  3. আরগান তেল (Argan Oil):
    • ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই তেল ত্বক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

সাবান (Soaps):

  1. গ্লিসারিন সাবান:
    • এমন সাবান ব্যবহার করুন যাতে গ্লিসারিন থাকে। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে।
  2. সুগন্ধি-মুক্ত সাবান:
    • সুগন্ধি এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
  3. প্রাকৃতিক সাবান:
    • অ্যালোভেরা বা নারকেল তেল সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সাবান ব্যবহার করতে পারেন।

সতর্কতা:

  • অতিরিক্ত গরম পানি এড়িয়ে চলুন।
  • ত্বকে কোনো নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে তা চিকিৎসকের অনুমতি নিন।
  • ক্ষতিগ্রস্ত বা জ্বালাপোড়া ত্বকে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক ও অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা কেমন হবে ? What will be Aromatherapy cosmetic and aromatherapy treatment for Liver Cancer patients?

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের ত্বক সংবেদনশীল এবং দুর্বল হয়ে উঠতে পারে। অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক পণ্যগুলো ত্বকের যত্নে সহায়ক হতে পারে এবং মানসিক প্রশান্তি আনতে সাহায্য করতে পারে। তবে যেকোনো পণ্য ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিকস:

  1. ল্যাভেন্ডার তেল সমৃদ্ধ লোশন (Lavender Oil Lotion):
    • ল্যাভেন্ডার তেল মানসিক চাপ কমায় এবং ত্বকে প্রশান্তি আনে।
    • এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এবং জ্বালাপোড়া কমাতে কার্যকর।
  2. জোজোবা তেল সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার:
    • জোজোবা তেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
    • এটি হালকা এবং অ্যালার্জি মুক্ত।
  3. অ্যারোমা বডি অয়েল (Aroma Body Oil):
    • নারকেল তেল বা আরগান তেলের সঙ্গে রোজমেরি, চন্দন বা ক্যামোমাইল তেলের মিশ্রণ ত্বককে শীতল রাখতে সাহায্য করে।
  4. লেমনগ্রাস সমৃদ্ধ ফেস ওয়াশ:
    • প্রাকৃতিক লেমনগ্রাস ত্বককে সতেজ রাখে এবং ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা করে।
  5. এসেনশিয়াল অয়েল সমৃদ্ধ বাথ সল্ট:
    • ল্যাভেন্ডার বা ইউক্যালিপটাস তেলযুক্ত বাথ সল্ট ব্যবহার করলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং ত্বক আরামদায়ক হয়।
  6. ক্যামোমাইল ক্রিম:
    • ক্যামোমাইল তেলের নির্যাস ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং শুষ্কতা দূর করতে কার্যকর।

লিভারের ক্যান্সার রোগীদের অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা: বাংলা ভাষায়

অ্যারোমাথেরাপি হলো প্রাকৃতিক এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করে মানসিক প্রশান্তি, ত্বকের আরাম এবং ব্যথা কমানোর একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। লিভারের ক্যান্সার রোগীদের জন্য এটি রোগীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।

অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসার পদ্ধতি:

  1. ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল:
    • রাতে ঘুমানোর আগে ল্যাভেন্ডার তেল বালিশে কয়েক ফোঁটা দিলে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুম ভালো হয়।
    • এটি মাথাব্যথা এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
  2. পেপারমিন্ট তেল:
    • পেপারমিন্ট তেল গরম পানিতে মিশিয়ে ভাপ নিলে ক্লান্তি কমে এবং মাইগ্রেনের ব্যথা উপশম হয়।
  3. ইউক্যালিপটাস তেল:
    • ইউক্যালিপটাস তেল শ্বাস প্রশ্বাসে সাহায্য করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
  4. রোজমেরি তেল:
    • রোজমেরি তেল মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং স্ট্রেস কমায়।
  5. ক্যামোমাইল তেল:
    • ক্যামোমাইল তেল ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং শারীরিক আরাম প্রদান করে।
  6. অ্যারোমা ডিফিউজার:
    • এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজারের মাধ্যমে ঘরে ছড়িয়ে দিলে একটি প্রশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

সতর্কতা:

  • গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের জন্য কিছু এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার উপযুক্ত নয়।
  • কোনো তেল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার না করে একটি ক্যারিয়ার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

লিভারের ক্যান্সার রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক A few famous Liver Cancer-related journals and web links

লিভারের ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার জন্য বেশ কিছু বিখ্যাত জার্নাল রয়েছে, যেখানে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং নতুন গবেষণার তথ্য পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল এবং তাদের ওয়েব লিংক দেওয়া হলো:

  1. Journal of Hepatology
    • এটি লিভার সম্পর্কিত রোগ এবং লিভারের ক্যান্সারের ওপর গবেষণাভিত্তিক একটি জার্নাল।
    • ওয়েব লিংক: Journal of Hepatology
  2. Hepatology (American Association for the Study of Liver Diseases – AASLD):
    • লিভার ডিজিজ এবং হেপাটোক্যান্সার নিয়ে নতুন গবেষণার তথ্য এই জার্নালে পাওয়া যায়।
    • ওয়েব লিংক: Hepatology Journal
  3. Liver Cancer Journal:
    • এটি বিশেষভাবে লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা ও গবেষণার ওপর ফোকাস করা একটি জার্নাল।
    • ওয়েব লিংক: Liver Cancer Journal
  4. Clinical Gastroenterology and Hepatology (CGH):
    • লিভারের ক্যান্সারসহ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের ওপর গবেষণাধর্মী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
    • ওয়েব লিংক: CGH Journal
  5. World Journal of Gastroenterology:
    • বিশ্বব্যাপী লিভারের ক্যান্সার এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের গবেষণার জন্য একটি বিখ্যাত জার্নাল।
    • ওয়েব লিংক: World Journal of Gastroenterology

উপসংহার Conclusion

লিভারের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ হলেও সচেতনতা এবং সঠিক জীবনধারা অবলম্বন করলে এটি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই, লিভার সুস্থ রাখতে নিজের খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা, এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

Diseases Category

রোগ ক্যাটাগরি

Cancer, Tumors & Cysts ক্যান্সার, টিউমার ও সিস্ট রোগ
Dermatology চর্ম, নখ ও চুলের রোগ
Obs & Gynecology গাইনী, প্রসূতি ও স্তনের রোগ
ENT & Pneumology নাক, কান, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ
Psychology মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগ চিকিৎসা
Rheumatology হাড়, পেশী ও জয়েন্টের রোগ
Pediatrics নবজাতক ও শিশু রোগ
Neurology ব্রেইন, স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভের রোগ
Sexology যৌন শক্তি ও যৌন বাহিত রোগ
Urology কিডনি, মুত্র, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড ও পুরুষ জননাঙ্গের রোগ
Gastroenterology পাকস্থলী ও হজম সংক্রান্ত রোগ
Coloproctology মলদ্বার, পায়ুপথ ও কোলনের রোগ
Hepatology লিভার ও পিত্তের রোগ
Ophthalmology চোখ, দৃষ্টি শক্তি ও চোখের পাতার রোগ
Acute & Emergency জ্বর, সংক্রামক ও ইমার্জেন্সি রোগ
Diabetes & Endocrinology ডায়াবেটিস ও হরমোন জনিত রোগ
Oral & Dental দাঁত ও মুখের রোগ
Cardiology হার্টের রোগ
Hematology রক্ত, বোনম্যারু, প্লিহা ও লিম্ফ নোডের রোগ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *