ENT & Pulmonology: নাক, কান, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ, রোগ পরিচিতি

এজমা বা শ্বাসকষ্ট (Asthma) – রোগের বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং প্রতিকার

এজমা বা শ্বাসকষ্ট

এজমা বা শ্বাসকষ্ট একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসনালী প্রদাহজনিত রোগ। এটি পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে এবং সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এটি জীবনযাত্রার গুণগত মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সঠিক সচেতনতা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

English Post

 

নিন্মোক্ত ইউটিউব প্লেলিস্টে শ্বাসকষ্টসহ কতিপয় নাক, কান, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেওয় আছে

এজমা বা শ্বাসকষ্ট কি? (What is Asthma?)

এজমা হলো একটি শ্বাসনালী প্রদাহজনিত রোগ যেখানে শ্বাসনালী সংকুচিত হয় এবং শ্বাস নেওয়ার সময় কষ্ট হয়। এর ফলে শ্বাসের সময় শিসের মতো শব্দ হয় এবং রোগী শ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভব করে।

এজমা কিভাবে হয়? (How Does Asthma Happen?)

এজমা সাধারণত শ্বাসনালীর প্রদাহের কারণে হয়, যা ধুলা, ধোঁয়া, ঠান্ডা বাতাস, অ্যালার্জেন এবং মানসিক চাপের ফলে উদ্দীপ্ত হতে পারে। শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া কঠিন করে তোলে।

এজমা কত প্রকার ও কি কি? (How Many Types of Asthma Are There?)

এজমার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে:

  • অ্যালার্জিক এজমা: ধুলা, পোলেন, পশুর লোম ইত্যাদি অ্যালার্জেন দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়।
  • নন-অ্যালার্জিক এজমা: ঠান্ডা বাতাস, দূষণ এবং ধোঁয়া দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়।
  • এক্সারসাইজ-ইনডিউসড এজমা: শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের সময় উদ্দীপ্ত হয়।
  • কফ-ভ্যারিয়েন্ট এজমা: শ্বাসকষ্টের পরিবর্তে কাশি প্রধান লক্ষণ।

এজমা হওয়ার কারণসমূহ কি? (What Are the Causes of Asthma?)

এজমা হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ধুলা, পোলেন, পশুর লোম (অ্যালার্জেন)
  • ধোঁয়া এবং বায়ু দূষণ
  • ঠান্ডা বাতাস বা আবহাওয়া
  • রাসায়নিক গ্যাস বা ধোঁয়া
  • মানসিক চাপ

এজমা রোগের লক্ষণসমূহ (Symptoms of Asthma)

এজমার প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • বুকে চাপ অনুভব করা
  • শ্বাস নেয়ার সময় শিসের মতো শব্দ হওয়া
  • কাশি, বিশেষ করে রাতে বা সকালে
  • শ্বাসকষ্ট

এজমা রোগের ক্রম বিকাশ (Progression of Asthma)

এজমার প্রাথমিক লক্ষণগুলো সময়ের সাথে সাথে বেড়ে যায় এবং রোগের অবনতি হতে পারে যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়। শ্বাসনালীর স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে এবং রোগী দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন।

এজমার ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি? (What is the Risk of Asthma and Rix Factor?)

এজমার ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু ফ্যাক্টর হলো:

  • পারিবারিক ইতিহাস
  • অ্যালার্জেনের সঙ্গে সংস্পর্শ
  • দূষিত পরিবেশে থাকা
  • ধূমপানের অভ্যাস
  • বেশি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ

এজমা রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়? (What Lab Tests Are Required to Diagnose Asthma?)

এজমা নির্ণয়ের জন্য কিছু সাধারণ টেস্ট করা হয়:

  • স্পাইরোমেট্রি: ফুসফুসের কার্যকারিতা মাপার জন্য।
  • পিক ফ্লো মিটার: শ্বাসের গতি মাপার জন্য।
  • অ্যালার্জি টেস্ট: অ্যালার্জির কারণ নির্ধারণ করতে।
  • ব্রঙ্কোপ্রভোকেশন টেস্ট: শ্বাসনালী কতটা সংকুচিত তা নির্ণয় করা।

এজমা রোগের জন্য কোন সার্জারি প্রয়োজন হয়? (Is Any Surgery Necessary for Asthma?)

সাধারণত এজমার জন্য কোনো সার্জারি প্রয়োজন হয় না। তবে, যদি এজমা গুরুতর হয়ে শ্বাসনালীর স্থায়ী ক্ষতি করে, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করা হতে পারে।

এজমা হলে করনীয় ও বর্জনীয় (What to Do and Avoid if You Have Asthma)

করনীয়:

  • নিয়মিত সহায়ক ভেষজ সেবন করা।
  • অ্যালার্জেন ও ধুলা থেকে দূরে থাকা।
  • নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম করা।

বর্জনীয়:

  • ধূমপান বা ধোঁয়ার সংস্পর্শে না আসা।
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা।
  • ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকা।

এজমা কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়? (How to Prevent Asthma?)

এজমা প্রতিরোধে কিছু সাধারণ উপায়:

  • অ্যালার্জেন এড়ানো।
  • দূষিত পরিবেশ থেকে দূরে থাকা।
  • নিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।
  • ধূমপান পরিহার করা।

এজমা রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে? (What Lifestyle Should Asthma Patients Follow?)

এজমা রোগীদের জীবনযাপনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন:

  • পরিচ্ছন্ন এবং ধুলা মুক্ত পরিবেশে থাকা।
  • ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা।

এজমা রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না (What Should Asthma Patients Eat and Avoid?)

কি খাবেন:

  • সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল।
  • আদা, মধু এবং লেবুর রস।

কি খাবেন না:

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার।
  • অতিরিক্ত চিনি এবং মসলাযুক্ত খাবার।

 (Exercise and Therapy for Asthma)

শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং নিয়মিত যোগব্যায়াম এজমার জন্য উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম শ্বাসনালীর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শ্বাসকষ্ট কমায়।

এজমা রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা (Allopathic Treatment for Asthma)

(বাধ্য না হলে সাইড ইফেক্ট যুক্ত চিকিৎসা নিব না)

এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় ইনহেলার এবং ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করা হয়, যা শ্বাসনালীর সংকোচন কমায়। স্টেরয়েড ওষুধ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।

এজমা রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা (Homeopathic Treatment for Asthma)

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এজমা রোগ সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হতে পারে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রোগীর নির্দিষ্ট লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয় এবং এটি এজমা রোগের মূল কারণ নিরাময়ে কার্যকর। খানে আমরা হোমিওপ্যাথি রেপার্টরি রুব্রিক এবং প্রয়োগিত ঔষধসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১. [Respiration] ASTHMATIC

এই রুব্রিকটি এজমার সাধারণ লক্ষণগুলির জন্য এবং নিম্নলিখিত ঔষধসমূহ ব্যবহৃত হয়:

  • Arsenicum Album (4): শ্বাসকষ্টের সময় রাতে অবস্থা খারাপ হলে ব্যবহৃত হয়।
  • Sulphur (4): দীর্ঘস্থায়ী এজমার জন্য কার্যকর।
  • Kali Carbonicum (4): শ্বাসকষ্টের সাথে পিঠে ব্যথা হলে প্রয়োগ করা হয়।
  • Pulsatilla (4): ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট বাড়লে এই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
  • Lachesis (4): শ্বাসকষ্টের সময় বুকে টান লাগলে ব্যবহৃত হয়।

২. [Respiration] ASTHMATIC: NIGHT

রাতে এজমা বৃদ্ধি পেলে যে ঔষধগুলি ব্যবহার করা হয়:

  • Arsenicum Album (4), Sulphur (3), Kali Carbonicum (4): রাতের এজমার জন্য কার্যকর ঔষধসমূহ।

৩. [Respiration] ASTHMATIC: MORNING

সকালে এজমার আক্রমণ হলে যে ঔষধগুলি ব্যবহৃত হয়:

  • Arsenicum Album (2), Sulphur (2), Kali Carbonicum (4): সকালবেলায় এজমার তীব্রতা বাড়লে এই ঔষধগুলি প্রয়োগ করা হয়।

৪. [Respiration] ASTHMATIC: AFTERNOON

বিকেলে এজমার তীব্রতা বাড়লে নিম্নলিখিত ঔষধগুলি ব্যবহৃত হয়:

  • Sulphur (3), Pulsatilla (4), Carbo Vegetabilis (3): বিকেলের সময় এজমা আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী।

এজমা রোগের ভেষজ চিকিৎসা (Herbal Treatment for Asthma)

ভেষজ চিকিৎসা এজমার লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। এখানে কিছু ভেষজ উপাদান এবং তাদের ব্যবহারের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

১. আদা (Ginger)

আদায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি শ্বাসনালী খুলে দিতে সাহায্য করে এবং এজমার লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখে। আদা চা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

২. হলুদ (Turmeric)

হলুদের কারকিউমিন উপাদানটি এজমার প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস উন্নত করতে কার্যকর। হলুদ দুধের সাথে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।

৩. লিকোরিস (Licorice Root)

লিকোরিস শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক এজমা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক একটি ভেষজ।

৪. থাইম (Thyme)

থাইমে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। থাইম চা হিসেবেও এটি খাওয়া যেতে পারে।

৫. কালোজিরা তেল (Black Seed Oil)

কালোজিরা তেল এজমার জন্য একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি শ্বাসনালীর সংকোচন কমাতে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস উন্নত করতে সহায়ক।

৬. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acids)

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছের তেল প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে।

৭. সবুজ চা (Green Tea)

সবুজ চায়ে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমিয়ে শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

এজমা রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক (A Few Famous Asthma-Related Journals and Web Links)

  • Journal of Asthma: Link
  • The Lancet Respiratory Medicine: Link
  • Chest Journal: Link

উপসংহার (Conclusion)

এজমা একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা, জীবনধারায় পরিবর্তন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এজমা রোগীরা একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

 

Diseases Category

রোগ ক্যাটাগরি

Cancer, Tumors & Cysts ক্যান্সার, টিউমার ও সিস্ট রোগ
Dermatology চর্ম, নখ ও চুলের রোগ
Obs & Gynecology গাইনী, প্রসূতি ও স্তনের রোগ
ENT & Pneumology নাক, কান, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ
Psychology মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগ চিকিৎসা
Rheumatology হাড়, পেশী ও জয়েন্টের রোগ
Pediatrics নবজাতক ও শিশু রোগ
Neurology ব্রেইন, স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভের রোগ
Sexology যৌন শক্তি ও যৌন বাহিত রোগ
Urology কিডনি, মুত্র, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড ও পুরুষ জননাঙ্গের রোগ
Gastroenterology পাকস্থলী ও হজম সংক্রান্ত রোগ
Coloproctology মলদ্বার, পায়ুপথ ও কোলনের রোগ
Hepatology লিভার ও পিত্তের রোগ
Ophthalmology চোখ, দৃষ্টি শক্তি ও চোখের পাতার রোগ
Acute & Emergency জ্বর, সংক্রামক ও ইমার্জেন্সি রোগ
Diabetes & Endocrinology ডায়াবেটিস ও হরমোন জনিত রোগ
Oral & Dental দাঁত ও মুখের রোগ
Cardiology হার্টের রোগ
Hematology রক্ত, বোনম্যারু, প্লিহা ও লিম্ফ নোডের রোগ

 

3 thoughts on “এজমা বা শ্বাসকষ্ট (Asthma) – রোগের বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং প্রতিকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *