Hepatology: লিভার ও পিত্তের রোগ, Gastroenterology: পাকস্থলী ও হজম সংক্রান্ত রোগ, রোগ পরিচিতি

পিত্ত পাথর এর সাইড ইফেক্ট মুক্ত চিকিৎসা ও বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি

আপনার কি কখনও পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা হয়েছে, যা আচমকাই শুরু হয়? হতে পারে এটি পিত্ত পাথর (Gallstones) এর লক্ষণ। এটি একটি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক সমস্যা, যা পিত্তথলির (Gallbladder) স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। পিত্ত পাথর আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং শরীরের মেটাবলিজমের ওপর নির্ভর করে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই পিত্ত পাথর কী, কীভাবে এটি হয়, এর প্রকারভেদ এবং রোগ হওয়ার কারণ।

English Post

সূচীপত্র

পিত্ত পাথর কি?
পিত্ত পাথর কিভাবে হয়?
পিত্ত পাথর কত প্রকার ও কি কি?
পিত্ত পাথর হওয়ার কারণসমূহ কি?
পিত্ত পাথর রোগের লক্ষণসমূহ
পিত্ত পাথর রোগের ক্রম বিকাশ
পিত্ত পাথরের ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি?
পিত্ত পাথর হলে করনীয় ও বর্জনীয়
পিত্ত পাথর রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়?
পিত্ত পাথর রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে?
পিত্ত পাথর রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না
পিত্ত পাথর রোগের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি
পিত্ত পাথর রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা
পিত্ত পাথর রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
পিত্ত পাথর রোগের ভেষজ চিকিৎসা
পিত্ত পাথর রোগীদে রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ কেমন হবে?
পিত্ত পাথর রোগীদে স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান কেমন হবে?
পিত্ত পাথর অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক ও অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা কেমন হবে ?
পিত্ত পাথর রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক

নিন্মোক্ত ইউটিউব প্লেলিস্টে পিত্ত পাথর সহ কতিপয় পাকস্থলী ও হজম সংক্রান্ত রোগের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেওয় আছে

পিত্ত পাথর কি? What is Gall Stones?

পিত্ত পাথর হলো পিত্তথলিতে জমে থাকা কঠিন কণার মতো পদার্থ, যা সাধারণত কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন, বা ক্যালসিয়াম লবণ দিয়ে তৈরি হয়। পিত্তথলি হলো যকৃতের (Liver) নিচে অবস্থিত একটি ছোট অঙ্গ, যা পিত্ত (Bile) ধরে রাখে এবং চর্বি হজমে সাহায্য করে। যখন এই পিত্তের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন পাথর তৈরি হতে পারে। পিত্ত পাথর আকারে ছোট (বালির দানা) থেকে বড় (গলফ বল) হতে পারে এবং একাধিক পাথর একসঙ্গে হতে পারে।

 

পিত্ত পাথর কিভাবে হয়? How does Gall Stones happen?

পিত্ত পাথর সাধারণত পিত্তের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে হয়। নিচে পাথর তৈরির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো:

  1. কোলেস্টেরলের অতিরিক্ত উপস্থিতি:
    • যদি পিত্তে বেশি কোলেস্টেরল থাকে, তবে এটি কঠিন কণার আকারে জমা হতে পারে।
  2. বিলিরুবিনের অতিরিক্ততা:
    • লিভারের ক্ষত বা রক্তশূন্যতার কারণে পিত্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জমে পাথর তৈরি হতে পারে।
  3. পিত্তথলির অসম্পূর্ণ খালি হওয়া:
    • পিত্তথলি সঠিকভাবে খালি না হলে সেখানে পিত্ত জমে পাথর তৈরি হতে পারে।

পিত্ত পাথর কত প্রকার ও কি কি? How many types of Gall Stones are there?

পিত্ত পাথরকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. কোলেস্টেরল পাথর (Cholesterol Stones):
    • এটি সবচেয়ে সাধারণ। এগুলো হলুদ-সবুজ রঙের হয় এবং কোলেস্টেরলের কারণে গঠিত।
  2. পিগমেন্ট পাথর (Pigment Stones):
    • এটি কালো বা গাঢ় বাদামী রঙের হয় এবং বিলিরুবিনের অতিরিক্ততার কারণে তৈরি হয়।
  3. মিশ্র পাথর (Mixed Stones):
    • এটি কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন এবং ক্যালসিয়ামের সংমিশ্রণে গঠিত।

পিত্ত পাথর হওয়ার কারণসমূহ কি? What are the causes of Gall Stones?

পিত্ত পাথর হওয়ার পেছনে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. খাদ্যাভ্যাস:
    • অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত এবং কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার পিত্ত পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়া:
    • অতিরিক্ত ওজন শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল বাড়িয়ে পাথর তৈরিতে সহায়তা করে।
  3. ওজন দ্রুত কমানো:
    • দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট পিত্তথলির কর্মক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
  4. জিনগত কারণ:
    • পারিবারিক ইতিহাসে পিত্ত পাথর থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
  5. লিভারের রোগ:
    • লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হলে বিলিরুবিনের অতিরিক্ততা দেখা দিতে পারে।
  6. বয়স ও লিঙ্গ:
    • ৪০ বছরের বেশি বয়সী এবং নারীদের মধ্যে পিত্ত পাথরের ঝুঁকি বেশি।

পিত্ত পাথর রোগের লক্ষণসমূহ Symptoms of Gall Stones

পিত্ত পাথর রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। তবে যদি পাথর পিত্তথলির কাজ ব্যাহত করে, তাহলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়:

  1. পেটের ডান দিকে ব্যথা:
    • বিশেষ করে খাবারের পর তীব্র ব্যথা।
  2. বমি বমি ভাব এবং বমি:
    • বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে।
  3. পিঠে ব্যথা:
    • পিঠের ডানদিকে ব্যথা।
  4. ত্বক এবং চোখের হলুদাভাব (জন্ডিস):
    • যদি পাথর পিত্তনালিতে আটকে যায়।
  5. হজমজনিত সমস্যা:
    • গ্যাস, ফোলাভাব এবং বদহজম।

পিত্ত পাথর রোগের ক্রম বিকাশ Progression of Gall Stones

পিত্ত পাথর রোগ ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং এর বিকাশ নিম্নরূপ হতে পারে:

  1. পিত্তে রাসায়নিক ভারসাম্যের পরিবর্তন:
    • কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন, বা ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ততা।
  2. পিত্ত জমাট বাঁধা:
    • পিত্তথলির সঠিকভাবে খালি না হওয়া।
  3. পাথরের আকার বৃদ্ধি:
    • ছোট পাথর ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা।
  4. পিত্তনালির বাধা:
    • পাথর পিত্তনালিতে আটকে গেলে ব্যথা এবং সংক্রমণ।
  5. সংক্রমণ:
    • পিত্তথলি বা লিভারে ইনফেকশন।

পিত্ত পাথরের ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি? What is the risk of Gall Stones and Rix factor? 

  1. খাদ্যাভ্যাস:
    • অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার।
  2. ওজন:
    • অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া।
  3. জেনেটিকস:
    • পারিবারিক ইতিহাসে পিত্ত পাথরের সমস্যা।
  4. বয়স এবং লিঙ্গ:
    • ৪০ বছরের বেশি বয়সী এবং নারীরা বেশি ঝুঁকিতে।
  5. ডায়াবেটিস:
    • রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পিত্ত পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়।
  6. ওষুধের প্রভাব:
    • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোন থেরাপি।

পিত্ত পাথর হলে করনীয় ও বর্জনীয় What to do and avoid if you have Gall Stones

করণীয়

  1. সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন:
    • ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, যেমন শাকসবজি ও ফলমূল।
  2. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
    • নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ।
  3. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
    • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
  4. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
    • যে কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

বর্জনীয়

  1. চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:
    • যেমন ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড।
  2. কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার বর্জন করুন:
    • যেমন মাখন, চিজ।
  3. তাড়াহুড়া করে ওজন কমানো থেকে বিরত থাকুন:
    • এটি পিত্ত পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন:
    • কেক, পেস্ট্রি।

পিত্ত পাথর রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়? What lab tests are required to diagnose Gall Stones?

পিত্ত পাথর রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা, ইমেজিং পরীক্ষা এবং কিছু নির্দিষ্ট ল্যাব টেস্ট প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে রোগ নির্ধারণ এবং চিকিৎসার জন্য এই পরীক্ষাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে পিত্ত পাথর রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্টগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:

পিত্ত পাথর নির্ণয়ে ল্যাব টেস্ট

  1. আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound):
    • পিত্তথলিতে পাথরের উপস্থিতি সনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে সাধারণ এবং নির্ভুল পদ্ধতি।
      কাজ: পিত্তথলির আকার এবং পাথরের অবস্থান নির্ণয় করে।
  2. সিটি স্ক্যান (CT Scan):
    • পিত্তথলির পাথর এবং পিত্তনালিতে জটিলতা পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
      কাজ: পাথরের আকার ও প্রভাব বিশদভাবে চিহ্নিত করে।
  3. এন্ডোস্কোপিক আল্ট্রাসাউন্ড (Endoscopic Ultrasound):
    • পিত্তনালিতে ছোট পাথর সনাক্ত করার জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর।
      কাজ: নরম টিস্যু এবং ক্ষুদ্র পাথর স্পষ্টভাবে দেখায়।
  4. এমআরসিপি (MRCP – Magnetic Resonance Cholangiopancreatography):
    • পিত্তনালি এবং প্যানক্রিয়াসের নালি স্ক্যান করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
      কাজ: পিত্তনালিতে পাথর আটকে থাকলে তা চিহ্নিত করে।
  5. রক্ত পরীক্ষা (Blood Tests):
    • লিভার ফাংশন টেস্ট (Liver Function Test): পিত্তথলির কার্যকারিতা এবং লিভারের অবস্থা যাচাই করার জন্য।
    • বিলিরুবিন টেস্ট: বিলিরুবিন লেভেল বাড়লে এটি পিত্তনালিতে বাধা নির্দেশ করতে পারে।
    • পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (Complete Blood Count – CBC): সংক্রমণ বা প্রদাহ আছে কিনা তা নির্ণয় করতে।
    • অ্যামাইলেজ ও লিপেজ টেস্ট: প্যানক্রিয়াসের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য।
  6. হাইডা স্ক্যান (HIDA Scan):
    • পিত্তথলির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ নিউক্লিয়ার মেডিসিন স্ক্যান।
      কাজ: পিত্তথলি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করে।

পিত্ত পাথর রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে? What lifestyle should Gall Stones patients follow?

পিত্ত পাথর রোগীদের জন্য সঠিক জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু পিত্ত পাথরের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে না, বরং হজম শক্তি বাড়াতে এবং যকৃত ও পিত্তথলিকে সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

লাইফস্টাইল

পিত্ত পাথর রোগীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

  1. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন:
    • অতিরিক্ত ওজন পিত্ত পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। ধীরে ধীরে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
    • হঠাৎ ওজন কমানোর ডায়েট এড়িয়ে চলুন।
  2. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
    • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, ইয়োগা বা সাঁতার কাটুন।
    • এটি পিত্তথলিতে পিত্ত জমে থাকার ঝুঁকি কমায়।
  3. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
    • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পিত্তের প্রবাহ উন্নত করে।
  4. নিয়মিত খাবার খান:
    • নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
    • দীর্ঘ সময় ক্ষুধার্ত থাকা পিত্তথলিতে পিত্ত জমা হতে সাহায্য করে।
  5. মানসিক চাপ কমান:
    • ধ্যান (Meditation) এবং রিলাক্সেশন পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
    • মানসিক চাপ হজম প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।

পিত্ত পাথর রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না What should Gall Stones patients eat and avoid?

কি খাবে

পিত্ত পাথর রোগীদের এমন খাবার খাওয়া উচিত যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

  1. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
    • ওটস, বাদামি চাল, ব্রকলি, গাজর, এবং শাকসবজি।
      উপকার: হজম উন্নত করে এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়।
  2. ফলমূল:
    • আপেল, নাশপাতি, বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি), এবং লেবু জাতীয় ফল।
      উপকার: প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সরবরাহ করে।
  3. চর্বিহীন প্রোটিন:
    • মুরগি (চামড়া ছাড়া), মাছ (স্যালমন, টুনা), ডাল, এবং সয়া।
      উপকার: শরীরের পুষ্টি বজায় রাখে।
  4. স্বাস্থ্যকর চর্বি:
    • জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো, এবং বাদাম।
      উপকার: পিত্তথলিতে পিত্ত জমতে দেয় না।
  5. ভেষজ চা:
    • গ্রিন টি, আদা চা।
      উপকার: হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।

কি খাবে না

পিত্ত পাথর রোগীদের এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যা পিত্তের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং প্রদাহ বাড়ায়।

  1. চর্বিযুক্ত খাবার:
    • ভাজা খাবার, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
      ক্ষতি: কোলেস্টেরল লেভেল বাড়িয়ে দেয়।
  2. প্রক্রিয়াজাত খাবার:
    • প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুড।
      ক্ষতি: পিত্তথলির কর্মক্ষমতা ব্যাহত করে।
  3. মিষ্টি ও চিনি:
    • সফট ড্রিঙ্ক, মিষ্টি খাবার, এবং কেক।
      ক্ষতি: শরীরে চর্বি জমতে সাহায্য করে।
  4. রেড মিট:
    • গরুর মাংস, খাসির মাংস।
      ক্ষতি: হজম প্রক্রিয়া ধীর করে।
  5. অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল:
    • কফি, অ্যালকোহল।
      ক্ষতি: পিত্তথলির প্রদাহ বাড়ায়।

পিত্ত পাথর রোগের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি Exercise and therapy for Gall Stones

পিত্ত পাথর রোগীদের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক ব্যায়াম এবং থেরাপির মাধ্যমে পিত্তথলির কার্যক্ষমতা উন্নত করা, প্রদাহ কমানো, এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। নিচে পিত্ত পাথর রোগীদের জন্য কার্যকর ব্যায়াম ও থেরাপির বিবরণ দেওয়া হলো:

ব্যায়াম

  1. পেটের ব্যায়াম (Abdominal Exercises):
    • কীভাবে করবেন:
      • মেঝেতে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করুন।
      • পেটের পেশি সংকুচিত করে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন।
      • এটি ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
        উপকারিতা: পিত্তথলির রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং পিত্ত জমে থাকা প্রতিরোধ করে।
  2. ব্রিদিং এক্সারসাইজ (Breathing Exercise):
    • কীভাবে করবেন:
      • গভীরভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে ছাড়ুন।
      • দিনে ৫-১০ মিনিট করুন।
        উপকারিতা: মানসিক চাপ কমায় এবং পিত্তথলির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  3. হাঁটা (Walking):
    • কীভাবে করবেন:
      • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
        উপকারিতা: হজম শক্তি উন্নত করে এবং পিত্তথলির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে।
  4. টুইস্ট এক্সারসাইজ (Torso Twists):
    • কীভাবে করবেন:
      • সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোমর থেকে ডান ও বাম দিকে ঘোরান।
      • প্রতিদিন ১০ বার করুন।
        উপকারিতা: পেটের পেশি সক্রিয় রাখে এবং পিত্ত প্রবাহ উন্নত করে।
  5. ইয়োগা (Yoga):
    • উপকারী আসন:
      • কobra pose (ভুজঙ্গাসন), Cat-cow stretch (মার্জার আসন), এবং Child’s pose (বালাসন)।
        উপকারিতা: হজমশক্তি বাড়ায় এবং পিত্তথলির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

থেরাপি

  1. গরম সেঁক (Warm Compress):
    • কীভাবে করবেন:
      • একটি হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম তোয়ালে পেটের ডান দিকে রাখুন।
      • দিনে ২-৩ বার ১০-১৫ মিনিটের জন্য এটি করুন।
        উপকারিতা: পিত্তথলির ব্যথা এবং প্রদাহ কমায়।
  2. অ্যারোমাথেরাপি (Aromatherapy):
    • তেল: ল্যাভেন্ডার তেল বা পেপারমিন্ট তেল।
    • কীভাবে ব্যবহার করবেন: ম্যাসাজ বা ডিফিউজারের মাধ্যমে তেল ব্যবহার করুন।
      উপকারিতা: মানসিক চাপ কমায় এবং পিত্তথলির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  3. অ্যাকিউপ্রেশার:
    • কীভাবে করবেন:
      • নির্দিষ্ট প্রেশার পয়েন্টে চাপ প্রয়োগ করে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করুন।
        উপকারিতা: পিত্তথলির কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
  4. প্ল্যানেট থেরাপি:
    • আদা এবং হলুদের চা পান করুন।
      উপকারিতা: প্রদাহ কমায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে।
  5. পানি থেরাপি (Hydrotherapy):
    • গরম পানিতে ১৫-২০ মিনিট গোসল করুন।
      উপকারিতা: শরীরকে শিথিল করে এবং পিত্তথলির প্রদাহ কমায়।

পিত্ত পাথর রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা Allopathic treatment for Gall Stones

পিত্ত পাথর রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা রোগীর পিত্ত পাথরের আকার, সংখ্যা, অবস্থান এবং রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা কমানো, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করা, এবং পিত্তথলির কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। নিচে পিত্ত পাথর রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হলো:

এলোপ্যাথি চিকিৎসার ধাপসমূহ

  1. ব্যথানাশক ওষুধ:
    • রোগীর ব্যথা কমানোর জন্য সাধারণত প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) ব্যবহার করা হয়।
      উপকারিতা: পিত্তথলির ব্যথা এবং প্রদাহ কমায়।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক:
    • যদি পিত্তথলিতে সংক্রমণ হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়।
      উপকারিতা: সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  3. পিত্তলিকৃত ওষুধ (Bile Dissolution Therapy):
    • ইউরসোডিওল (Ursodiol) বা চেনোডিওল (Chenodiol) নামক ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা ছোট পাথর গলিয়ে দিতে সাহায্য করে।
      উপকারিতা: পিত্ত পাথর ধীরে ধীরে ছোট করে এবং সম্পূর্ণ গলিয়ে দিতে পারে।
  4. এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলাঞ্জিওপ্যানক্রিয়াটোগ্রাফি (ERCP):
    • পিত্তনালিতে পাথর আটকে গেলে এন্ডোস্কোপিক পদ্ধতির মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হয়।
      উপকারিতা: পিত্তনালির বাধা দূর করে এবং ব্যথা কমায়।
  5. সার্জারি:
    • ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটমি (Gallbladder Removal Surgery):
      পিত্তথলি অপসারণের জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতি। এটি তখন করা হয় যখন পাথর সমস্যাজনক হয় বা চিকিৎসায় কাজ না হয়।
    • ওপেন সার্জারি: জটিল ক্ষেত্রে ওপেন পদ্ধতিতে পিত্তথলি অপসারণ করা হয়।
      উপকারিতা: পুনরায় পাথর তৈরির ঝুঁকি দূর করে।
  6. শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (Shock Wave Lithotripsy):
    • বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে শক ওয়েভ প্রয়োগ করে পাথর ভেঙে ছোট করা হয়।
      উপকারিতা: এটি পিত্তথলি অপসারণ ছাড়াই পাথর ভেঙে দেয়।

পিত্ত পাথর রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা Homeopathic treatment for Gall Stones

পিত্ত পাথর রোগের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটি কার্যকর এবং নিরাপদ পদ্ধতি হতে পারে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রোগীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এটি পিত্ত পাথর গলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে ও ব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে। নিচে পিত্ত পাথরের জন্য ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথি ওষুধ এবং তাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:

হোমিওপ্যাথি ওষুধসমূহ

  1. কালক্যারিয়া কার্ব (Calcarea Carbonica):
    • যখন রোগীর পিত্ত পাথর সংক্রান্ত ব্যথা খাবার খাওয়ার পর বৃদ্ধি পায়।
    • রোগীর ওজন বেশি থাকলে এটি কার্যকর।
      উপকারিতা: পিত্ত পাথর গলাতে এবং পেটের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
  2. লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium):
    • যদি পিত্ত পাথরের কারণে গ্যাস, ফোলাভাব এবং ডান পেটে ব্যথা হয়।
    • চর্বিযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা হলে এটি ব্যবহার করা হয়।
      উপকারিতা: হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ব্যথা কমায়।
  3. চেলিডোনিয়াম মেজর (Chelidonium Majus):
    • পিত্তথলির প্রদাহজনিত কারণে ডান কাঁধ ও পিঠে ব্যথা হলে এটি কার্যকর।
      উপকারিতা: পিত্ত প্রবাহ উন্নত করে এবং যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  4. কার্ডুস ম্যারিয়েনাস (Carduus Marianus):
    • পিত্তথলি এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
    • পিত্ত পাথর এবং লিভারের প্রদাহ একসঙ্গে থাকলে এটি কার্যকর।
      উপকারিতা: যকৃত ও পিত্তথলির প্রদাহ কমায়।
  5. বারবারিস ভালগারিস (Berberis Vulgaris):
    • যখন তীব্র ব্যথা ডান দিক থেকে পিঠের দিকে ছড়ায়।
      উপকারিতা: পিত্ত পাথরের কারণে সৃষ্ট ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করে।
  6. নাক্স ভোমিকা (Nux Vomica):
    • যখন চর্বি, মশলাদার খাবার বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা শুরু হয়।
      উপকারিতা: হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস কমায়।
  7. ফসফরাস (Phosphorus):
    • দীর্ঘস্থায়ী পিত্ত পাথর এবং পিত্তথলির অকার্যকারিতায় এটি ব্যবহৃত হয়।
      উপকারিতা: পিত্তথলির প্রদাহ ও অস্বস্তি কমায়।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় করণীয়

  1. সঠিক ওষুধ বেছে নিতে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  2. নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ এবং চিকিৎসকের দেওয়া নির্দেশ মেনে চলুন।
  3. ফাস্ট ফুড, চর্বিজাতীয় খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার করুন।
  4. পর্যাপ্ত পানি পান এবং সুষম খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করুন।

পিত্ত পাথর রোগের ভেষজ চিকিৎসা Herbal treatment for Gall Stones

পিত্ত পাথর রোগের ক্ষেত্রে ভেষজ চিকিৎসা একটি প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ পদ্ধতি হতে পারে। বিভিন্ন ভেষজ উপাদান পিত্ত পাথর গলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে এবং যকৃত ও পিত্তথলির কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। নিচে পিত্ত পাথর রোগের জন্য কার্যকর ভেষজ চিকিৎসার বিবরণ দেওয়া হলো:

ভেষজ চিকিৎসার পদ্ধতি

  1. আদা (Ginger):
    • আদার মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা পিত্তথলির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
      ব্যবহার:
      • আদার চা পান করুন।
      • প্রতিদিন ১-২ কাপ আদা চা পান করলে হজম উন্নত হবে।
  2. হলুদ (Turmeric):
    • হলুদের কারকিউমিন (Curcumin) উপাদান পিত্ত প্রবাহ উন্নত করে এবং প্রদাহ কমায়।
      ব্যবহার:
      • এক গ্লাস গরম দুধে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
      • পিত্তথলির প্রদাহ কমানোর জন্য এটি দিনে ১ বার পান করুন।
  3. ডান্ডেলিয়ন রুট (Dandelion Root):
    • ডান্ডেলিয়ন রুট যকৃত এবং পিত্তথলির কার্যকারিতা উন্নত করে।
      ব্যবহার:
      • ডান্ডেলিয়ন রুট চা তৈরি করে দিনে ১-২ বার পান করুন।
  4. পুদিনা পাতা (Peppermint):
    • পুদিনা পাতা পিত্তথলির কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং পাথর গলাতে সাহায্য করে।
      ব্যবহার:
      • পুদিনা চা পান করুন বা পুদিনা তেলের কয়েক ফোঁটা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
  5. আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar):
    • আপেল সিডার ভিনেগার পিত্ত পাথরের ব্যথা কমাতে এবং হজম উন্নত করতে কার্যকর।
      ব্যবহার:
      • এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
  6. পাথর কুচি (Stone Breaker – Chanca Piedra):
    • এই ভেষজটি পিত্ত পাথর ভাঙতে সাহায্য করে।
      ব্যবহার:
      • চা তৈরি করে দিনে ১-২ বার পান করুন।
  7. অলিভ অয়েল এবং লেবুর রস:
    • পিত্তথলির কার্যকারিতা উন্নত করতে অলিভ অয়েল এবং লেবুর রসের মিশ্রণ কার্যকর।
      ব্যবহার:
      • ১ চামচ অলিভ অয়েল ও ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন।

ভেষজ চিকিৎসায় করণীয়

  1. প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন (৮-১০ গ্লাস)।
  2. স্বাস্থ্যকর এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করুন।
  3. অতিরিক্ত চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  4. নিয়মিত ভেষজ চা পান করুন।

পিত্ত পাথর রোগীদের রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ কেমন হবে? What will be the cooking materials and environment in patients with Gall Stones?

পিত্ত পাথর রোগীদের জন্য রান্নার উপকরণ এবং পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করা উচিত, যা তাদের সুস্থতার জন্য সহায়ক এবং পিত্তথলির অতিরিক্ত চাপে না ফেলে সহজপাচ্য খাবার প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। নিচে এই রোগীদের জন্য রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

রান্নার উপকরণ

  1. স্বাস্থ্যকর তেল:
    • ব্যবহার করুন:
      • জলপাই তেল (Olive Oil)।
      • নারকেল তেল (Coconut Oil)।
        উপকারিতা: এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সরবরাহ করে এবং পিত্ত প্রবাহ উন্নত করে।
    • এড়িয়ে চলুন:
      • ঘি, মাখন, বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত তেল।
  2. কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন:
    • ব্যবহার করুন:
      • মুরগি (চামড়া ছাড়া), মাছ (স্যামন, টুনা)।
      • ডাল, মটরশুটি এবং সয়া।
        উপকারিতা: এটি প্রোটিনের ভালো উৎস এবং সহজপাচ্য।
    • এড়িয়ে চলুন:
      • লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সসেজ)।
  3. ফাইবারসমৃদ্ধ উপাদান:
    • ব্যবহার করুন:
      • ব্রাউন রাইস, ওটস, কোয়িনোয়া।
      • সবুজ শাকসবজি (পালং শাক, ব্রকলি)।
        উপকারিতা: এটি হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং পিত্ত পাথর প্রতিরোধে কার্যকর।
  4. ফলমূল:
    • ব্যবহার করুন:
      • আপেল, নাশপাতি, বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি)।
      • সাইট্রাস ফল যেমন কমলা ও লেবু।
        উপকারিতা: এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে এবং প্রদাহ কমায়।
  5. মশলা:
    • ব্যবহার করুন:
      • হলুদ, আদা, রসুন।
        উপকারিতা: এটি প্রদাহ কমায় এবং হজমে সাহায্য করে।

রান্নার পরিবেশ

  1. পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রান্নাঘর:
    • রান্নার আগে এবং পরে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখুন।
    • পুষ্টিকর উপকরণ রাখতে সঠিক স্টোরেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  2. স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি:
    • বেক, গ্রিল বা সেদ্ধ করা পদ্ধতিতে রান্না করুন।
    • অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার পরিহার করুন।
  3. পানি ব্যবহারের সঠিকতা:
    • রান্নায় পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করুন।
    • বিশেষ করে সেদ্ধ বা স্টিম করা খাবারের জন্য।
  4. অতিরিক্ত মশলা এবং লবণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন:
    • রান্নায় অতিরিক্ত লবণ বা মশলা খাবারকে হজমে কঠিন করে তুলতে পারে।
  5. গরম এবং বায়ু চলাচল সুবিধাজনক রাখুন:
    • রান্নার সময় রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।

পিত্ত পাথর রোগীদের স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান কেমন হবে? How about skin creams, lotions, oils and soaps for Gall Stones patients?

পিত্ত পাথর রোগীদের ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, বিশেষত যখন হজম সমস্যা বা প্রদাহের কারণে ত্বকে শুষ্কতা, অস্বস্তি, বা চুলকানি দেখা দেয়। সঠিক স্কিন কেয়ার পণ্য ব্যবহার ত্বককে সুরক্ষিত ও নরম রাখতে সাহায্য করে। নিচে পিত্ত পাথর রোগীদের জন্য উপযুক্ত স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল, এবং সাবানের বিবরণ দেওয়া হলো:

স্কিন ক্রিম

  1. ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম:
    • উপাদান: অ্যালোভেরা, শিয়া বাটার, এবং ভিটামিন ই।
    • উপকারিতা: ত্বককে গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা দূর করে।
    • ব্যবহার: দিনে ২ বার ক্রিম লাগান, বিশেষত গোসলের পর এবং ঘুমানোর আগে।
  2. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্রিম:
    • উপাদান: ক্যালেন্ডুলা, চা গাছের তেল (Tea Tree Oil)।
    • উপকারিতা: প্রদাহ কমায় এবং ত্বকের জ্বালাভাব দূর করে।

লোশন

  1. ফাইবারসমৃদ্ধ লোশন:
    • উপাদান: গ্লিসারিন, কোকোয়া বাটার।
    • উপকারিতা: ত্বক নরম রাখে এবং ফাটাভাব প্রতিরোধ করে।
    • ব্যবহার: প্রতিদিন গোসলের পর সারা শরীরে লোশন লাগান।
  2. হালকা সুগন্ধযুক্ত লোশন:
    • উপাদান: ল্যাভেন্ডার তেল বা জোজোবা তেল।
    • উপকারিতা: ত্বককে সতেজ রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।

তেল

  1. নারকেল তেল (Coconut Oil):
    • উপকারিতা: ত্বক মসৃণ রাখে এবং ফাটাভাব দূর করে।
    • ব্যবহার: রাতে ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে তেল লাগান।
  2. অলিভ অয়েল (Olive Oil):
    • উপকারিতা: প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
    • ব্যবহার: নিয়মিত ম্যাসাজের জন্য ব্যবহার করুন।
  3. ল্যাভেন্ডার তেল (Lavender Oil):
    • উপকারিতা: প্রদাহ কমায় এবং ত্বকে আরামদায়ক অনুভূতি প্রদান করে।

সাবান

  1. মাইল্ড সাবান (Mild Soap):
    • উপাদান: গ্লিসারিন, অ্যালোভেরা।
    • উপকারিতা: ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং শুষ্কতা দূর করে।
    • ব্যবহার: প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
  2. অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান:
    • উপাদান: চা গাছের তেল, তুলসির নির্যাস।
    • উপকারিতা: ত্বককে জীবাণুমুক্ত রাখে এবং ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

পিত্ত পাথর রোগীদের অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক ও অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা কেমন হবে ? What will be Aromatherapy cosmetic and aromatherapy treatment for Gall Stones patients?

পিত্ত পাথর রোগীদের ত্বকের যত্নে অ্যারোমাথেরাপি পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, প্রদাহ কমায়, এবং শরীরকে শিথিল করে। নিচে পিত্ত পাথর রোগীদের জন্য উপযুক্ত অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক পণ্যের বিবরণ দেওয়া হলো:

অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক পণ্য:
  1. ল্যাভেন্ডার তেলযুক্ত ক্রিম (Lavender Oil Cream):
    • উপকারিতা: ত্বককে শান্ত করে এবং প্রদাহ কমায়।
    • ব্যবহার: প্রতিদিন ত্বকে মসৃণভাবে লাগান, বিশেষত রাতে।
  2. পুদিনা তেলযুক্ত লোশন (Peppermint Oil Lotion):
    • উপকারিতা: শীতল অনুভূতি প্রদান করে এবং ত্বকের আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
    • ব্যবহার: গোসলের পর সারা শরীরে ব্যবহার করুন।
  3. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি তেল (Anti-Inflammatory Oils):
    • উপাদান: ইউক্যালিপটাস তেল এবং রোজমেরি তেল।
    • উপকারিতা: পেশির ক্লান্তি দূর করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
  4. অ্যারোমা বাথ সল্ট (Aroma Bath Salt):
    • উপাদান: ল্যাভেন্ডার এবং পুদিনা তেল।
    • উপকারিতা: গরম পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করলে শরীরকে রিলাক্স করে।

অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা

পিত্ত পাথর রোগীদের শারীরিক এবং মানসিক স্বস্তি দেওয়ার জন্য অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকর। এটি প্রদাহ কমায়, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শরীরকে আরাম প্রদান করে।

অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসার ধাপসমূহ:
  1. গরম সেঁক (Warm Compress):
    • উপাদান: ৫-৬ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল বা রোজমেরি তেল গরম পানিতে মিশিয়ে নিন।
    • কীভাবে করবেন: একটি পরিষ্কার তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে পেটের ডানদিকে রাখুন।
    • উপকারিতা: প্রদাহ কমায় এবং ব্যথা প্রশমিত করে।
  2. অ্যারোমা ডিফিউজার:
    • উপাদান: পুদিনা তেল, ল্যাভেন্ডার তেল।
    • কীভাবে ব্যবহার করবেন: ডিফিউজারে কয়েক ফোঁটা তেল যোগ করুন এবং ঘরে ছড়িয়ে দিন।
    • উপকারিতা: মানসিক চাপ কমায় এবং হজমে সাহায্য করে।
  3. অ্যারোমা ম্যাসাজ:
    • তেল মিশ্রণ: ২ চা চামচ অলিভ অয়েলে ৩ ফোঁটা রোজমেরি তেল ও ২ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে নিন।
    • কীভাবে করবেন: হালকা হাতে পেট এবং পিঠে ম্যাসাজ করুন।
    • উপকারিতা: পেশি শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
  4. ফুট সোক (Foot Soak):
    • উপাদান: গরম পানিতে ল্যাভেন্ডার তেল এবং ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করুন।
    • কীভাবে করবেন: ১৫-২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন।
    • উপকারিতা: ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরকে রিলাক্স করে।

পিত্ত পাথর রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক A few famous Gall Stones-related journals and web links

পিত্ত পাথর রোগ এবং এর চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। পিত্ত পাথর নিয়ে প্রামাণ্য গবেষণা পড়ার জন্য নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জার্নালের নাম ও তাদের ওয়েব লিংক দেওয়া হলো:

১. The Lancet Gastroenterology & Hepatology

  • এটি একটি প্রখ্যাত জার্নাল যা হজমতন্ত্র এবং যকৃত-সম্পর্কিত রোগ নিয়ে গবেষণা প্রকাশ করে।
    ওয়েবসাইট: https://www.thelancet.com/journals/langas/

২. World Journal of Gastroenterology (WJG):

  • পিত্ত পাথর, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিজঅর্ডার এবং হেপাটোলজি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা।
    ওয়েবসাইট: https://www.wjgnet.com/

৩. Journal of Hepatology

  • যকৃত এবং পিত্তথলির কার্যকারিতা ও রোগ নিয়ে গবেষণা।
    ওয়েবসাইট: https://www.journal-of-hepatology.eu/

৪. Gastroenterology (AGA Journal):

  • পিত্ত পাথর, যকৃতের রোগ এবং হজমতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে গবেষণা।
    ওয়েবসাইট: https://www.gastrojournal.org/

৫. Hepatology International

  • এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ দ্য লিভার (APASL) এর অধীনে প্রকাশিত। এটি পিত্ত পাথর এবং যকৃতের রোগ নিয়ে কাজ করে।
    ওয়েবসাইট: https://www.springer.com/journal/12072

উপসংহার Conclusion

পিত্ত পাথর একটি কমন সমস্যা হলেও সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। পেটের ব্যথা বা হজমজনিত সমস্যায় অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে আপনার পিত্তথলি সুস্থ রাখুন এবং পিত্ত পাথরের ঝুঁকি কমান।

Diseases Category

রোগ ক্যাটাগরি

Cancer, Tumors & Cysts ক্যান্সার, টিউমার ও সিস্ট রোগ
Dermatology চর্ম, নখ ও চুলের রোগ
Obs & Gynecology গাইনী, প্রসূতি ও স্তনের রোগ
ENT & Pneumology নাক, কান, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ
Psychology মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগ চিকিৎসা
Rheumatology হাড়, পেশী ও জয়েন্টের রোগ
Pediatrics নবজাতক ও শিশু রোগ
Neurology ব্রেইন, স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভের রোগ
Sexology যৌন শক্তি ও যৌন বাহিত রোগ
Urology কিডনি, মুত্র, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড ও পুরুষ জননাঙ্গের রোগ
Gastroenterology পাকস্থলী ও হজম সংক্রান্ত রোগ
Coloproctology মলদ্বার, পায়ুপথ ও কোলনের রোগ
Hepatology লিভার ও পিত্তের রোগ
Ophthalmology চোখ, দৃষ্টি শক্তি ও চোখের পাতার রোগ
Acute & Emergency জ্বর, সংক্রামক ও ইমার্জেন্সি রোগ
Diabetes & Endocrinology ডায়াবেটিস ও হরমোন জনিত রোগ
Oral & Dental দাঁত ও মুখের রোগ
Cardiology হার্টের রোগ
Hematology রক্ত, বোনম্যারু, প্লিহা ও লিম্ফ নোডের রোগ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *