Acute & Emergency: জ্বর, সংক্রামক ও ইমার্জেন্সি রোগ, রোগ পরিচিতি

জলবসন্ত এর সাইড ইফেক্ট মুক্ত চিকিৎসা ও বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি

জলবসন্ত (Chickenpox) একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। এটি মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারেন। ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (Varicella-Zoster Virus) এর কারণে এই রোগ হয়। শরীরে ছোট ছোট লাল ফোস্কা, চুলকানি, এবং জ্বর এই রোগের প্রধান লক্ষণ। জলবসন্ত সাধারণত প্রাণঘাতী নয়, তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা জলবসন্তের কারণ, প্রকার এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

English Post

সূচীপত্র

জলবসন্ত কি?
জলবসন্ত কিভাবে হয়?
জলবসন্ত কত প্রকার ও কি কি?
জলবসন্ত হওয়ার কারণসমূহ কি?
জলবসন্ত রোগের লক্ষণসমূহ
জলবসন্ত রোগের ক্রম বিকাশ
জলবসন্তের ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি?
জলবসন্ত হলে করনীয় ও বর্জনীয়
জলবসন্ত রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়?
জলবসন্ত রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে?
জলবসন্ত রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না
জলবসন্ত রোগের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি
জলবসন্ত রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা
জলবসন্ত রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
জলবসন্ত রোগের ভেষজ চিকিৎসা
জলবসন্ত রোগীদে রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ কেমন হবে?
জলবসন্ত রোগীদে স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান কেমন হবে?
জলবসন্ত অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক ও অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা কেমন হবে ?
জলবসন্ত রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক

নিন্মোক্ত ইউটিউব প্লেলিস্টে জলবসন্ত সহ কতিপয় : জ্বর, সংক্রামক ও ইমার্জেন্সি রোগের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেওয় আছে

জলবসন্ত কি? What is Chickenpox?

জলবসন্ত একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যেখানে শরীরে ছোট ছোট ফোস্কা বা গুটি হয় এবং তীব্র চুলকানি হয়। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

জলবসন্ত কিভাবে হয়? How does Chickenpox happen?

জলবসন্ত প্রধানত ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সহজেই ছড়াতে পারে। সংক্রমণের মাধ্যমগুলো হলো:

  1. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে।
  2. সংক্রমিত ফোস্কার তরল বা চামড়ার সংস্পর্শে আসলে।
  3. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন তোয়ালে বা জামাকাপড়।

জলবসন্ত কত প্রকার ও কি কি? How many types of Chickenpox are there?

জলবসন্তকে সাধারণত দুই প্রকারে ভাগ করা যায়:

  1. প্রাথমিক জলবসন্ত (Primary Chickenpox):
    • প্রথমবার ভাইরাস সংক্রমণে যে রোগ হয়।
    • শরীরে ফোস্কা, চুলকানি, এবং জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়।
  2. সেকেন্ডারি বা শিংগেলস (Secondary Chickenpox/Shingles):
    • ভাইরাস পুনরায় সক্রিয় হলে শিংগেলস হতে পারে।
    • সাধারণত এটি বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

জলবসন্ত হওয়ার কারণসমূহ কি? What are the causes of Chickenpox?

  1. ভাইরাস সংক্রমণ:
    • ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (Varicella-Zoster Virus)।
  2. দুর্বল ইমিউন সিস্টেম:
    • শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে।
  3. ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ:
    • সংক্রামিত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকার ফলে।
  4. শিশুদের ঝুঁকি বেশি:
    • ১০ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়।

জলবসন্ত রোগের লক্ষণসমূহ Symptoms of Chickenpox

জলবসন্ত একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা মূলত ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো ত্বকে ছোট ছোট ফোস্কা, যা তীব্র চুলকানি এবং অসুবিধা সৃষ্টি করে। রোগের ক্রম বিকাশ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর সঠিকভাবে জানা থাকলে এটি মোকাবেলা করা সহজ হয়।

জলবসন্তের লক্ষণ (Symptoms of Chickenpox):

  1. লাল ফোস্কা বা গুটি:
    • শরীরজুড়ে ছোট ছোট লাল ফোস্কা দেখা যায়, যা পরে ফেটে তরল বের হয়।
  2. তীব্র চুলকানি:
    • আক্রান্ত স্থানগুলোতে তীব্র চুলকানি হয়।
  3. জ্বর:
    • হালকা থেকে মাঝারি জ্বর হতে পারে।
  4. মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি:
    • মাথাব্যথা এবং দুর্বলতা অনুভূত হয়।
  5. ক্ষুধামান্দ্য:
    • রোগী সাধারণত খাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে।
  6. গলায় ব্যথা:
    • শ্বাসতন্ত্রে প্রভাব পড়লে গলায় ব্যথা হতে পারে।

জলবসন্ত রোগের ক্রম বিকাশ Progression of Chickenpox

জলবসন্তের ক্রম বিকাশ (Progression of Chickenpox):

  1. প্রাথমিক পর্যায়:
    • জ্বর, মাথাব্যথা, এবং ক্লান্তি দেখা দেয়।
    • শরীরে লাল র‍্যাশ বা দাগ দেখা যায়।
  2. মধ্যবর্তী পর্যায়:
    • লাল দাগগুলো ফোস্কায় পরিণত হয় এবং এর ভেতরে তরল জমা হয়।
    • চুলকানি তীব্র হতে থাকে।
  3. উন্নত পর্যায়:
    • ফোস্কাগুলো ফেটে যায় এবং শুকিয়ে যায়।
    • ক্ষত তৈরি হয় যা সময়ের সঙ্গে সেরে যায়।

জলবসন্তের ঝুঁকি ও রিক্স ফ্যাক্টর কি? What is the risk of Chickenpox and Rix factor? 

  1. টিকা না নেওয়া:
    • যাঁরা ভেরিসেলা টিকা গ্রহণ করেননি, তাদের ঝুঁকি বেশি।
  2. শিশু এবং বৃদ্ধরা:
    • শিশু এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
  3. দুর্বল ইমিউন সিস্টেম:
    • ক্যান্সার বা HIV রোগীদের মতো দুর্বল ইমিউন সিস্টেম থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
  4. গর্ভবতী নারী:
    • গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে।
  5. জটিল পরিবেশ:
    • ঘনবসতিপূর্ণ বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

জলবসন্ত হলে করনীয় ও বর্জনীয় What to do and avoid if you have Chickenpox

করণীয় (What to Do):

  1. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
    • সংক্রমিত স্থানে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন।
  2. নখ ছোট রাখুন:
    • ফোস্কায় চুলকানি করার ফলে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, তাই নখ ছোট রাখা উচিত।
  3. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
    • জ্বর বা ফোস্কার সংখ্যা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  4. সঠিক ওষুধ ব্যবহার করুন:
    • চুলকানি এবং জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ ব্যবহার করুন।
  5. আরামদায়ক পোশাক পরুন:
    • ঢিলেঢালা এবং সুতি কাপড় পরুন যা চুলকানি কমাবে।

বর্জনীয় (What to Avoid):

  1. চুলকানি করা এড়িয়ে চলুন:
    • ফোস্কাগুলো চুলকালে ক্ষত তৈরির ঝুঁকি বাড়ে।
  2. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন:
    • সংক্রমণ অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে।
  3. গরম বা শক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:
    • গলায় ব্যথা থাকলে নরম এবং তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
  4. অতিরিক্ত কাজ বা ক্লান্তি এড়িয়ে চলুন:
    • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  5. নিজে থেকে ওষুধ সেবন করবেন না:
    • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।

জলবসন্ত রোগ নির্নয়ে কি কি ল্যাবটেস্ট করাতে হয়? What lab tests are required to diagnose Chickenpox?

জলবসন্ত রোগ সাধারণত লক্ষণ দেখে নির্ণয় করা হয়, যেমন ফোস্কা, চুলকানি এবং জ্বর। তবে কিছু ক্ষেত্রে রোগ নিশ্চিত করতে ল্যাব টেস্ট করানো প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে যদি রোগের লক্ষণ অস্পষ্ট হয় বা রোগটি অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের সঙ্গে মিলে যায়।

জলবসন্ত রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাব টেস্টসমূহ (Lab Tests for Chickenpox Diagnosis):

  1. পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (PCR) টেস্ট:
    • কীসে ব্যবহৃত হয়: ভাইরাসের ডিএনএ সনাক্ত করতে।
    • উপকারিতা: ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস নিশ্চিত করার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
    • কিভাবে করা হয়: রোগীর ফোস্কা থেকে তরল বা চামড়ার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
  2. ডাইরেক্ট ফ্লুরোসেন্ট অ্যান্টিবডি (DFA) টেস্ট:
    • কীসে ব্যবহৃত হয়: ভাইরাস সনাক্ত করতে দ্রুত ফলাফল প্রদান করে।
    • উপকারিতা: এটি দ্রুত এবং নির্ভুল পদ্ধতি।
  3. সেরোলজিকাল টেস্ট:
    • কীসে ব্যবহৃত হয়: রক্তে ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সনাক্ত করতে।
    • উপকারিতা: এটি প্রমাণ করে রোগী বর্তমানে সংক্রমিত হয়েছে নাকি আগে সংক্রমিত হয়েছে।
  4. ইমিউনোগ্লোবুলিন এম (IgM) অ্যান্টিবডি টেস্ট:
    • কীসে ব্যবহৃত হয়: সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিবডি সনাক্ত করতে।
    • উপকারিতা: রোগ শনাক্ত করার দ্রুত পদ্ধতি।
  5. ভাইরাল কালচার টেস্ট:
    • কীসে ব্যবহৃত হয়: ফোস্কার তরল থেকে ভাইরাস পৃথক করার জন্য।
    • উপকারিতা: এটি সময়সাপেক্ষ হলেও নির্ভুল ফলাফল দেয়।

কেন এই টেস্টগুলো প্রয়োজন:

  1. সঠিক রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে।
  2. জটিলতা থাকলে বা রোগের অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে।
  3. অন্য কোনো সংক্রমণ (যেমন শিংগেলস বা হারপিস) থেকে এটি আলাদা করতে।

জলবসন্ত রোগীদের লাইফ স্টাইল কেমন হবে? What lifestyle should Chickenpox patients follow?

জলবসন্ত রোগীদের জন্য একটি সঠিক লাইফস্টাইল এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রোগের দ্রুত সেরে ওঠায় সাহায্য করে। রোগের সময় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে, এমন কিছু খাবার এবং অভ্যাস এড়ানো উচিত যা রোগের অবস্থা খারাপ করতে পারে।

জলবসন্ত রোগীদের লাইফস্টাইল (Lifestyle for Chickenpox Patients):

  1. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
    • শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিন।
  2. চুলকানি এড়িয়ে চলুন:
    • ফোস্কায় চুলকালে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই নখ ছোট রাখুন এবং হাত পরিষ্কার রাখুন।
  3. ঠান্ডা স্নান করুন:
    • ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে চুলকানি কমে এবং ত্বক আরাম পায়।
  4. ঢিলেঢালা এবং নরম পোশাক পরুন:
    • সুতি কাপড় ব্যবহার করুন যা ত্বকের চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
  5. শরীর ঠান্ডা রাখুন:
    • অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলুন এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  6. প্রচুর পানি পান করুন:
    • শরীর হাইড্রেটেড রাখুন এবং ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পানি পান করুন।

জলবসন্ত রোগীরা কি খাবে এবং কি খাবে না What should Chickenpox patients eat and avoid?

জলবসন্ত রোগীদের জন্য কি খাবে (What to Eat for Chickenpox Patients):

  1. তরল খাবার:
    • স্যুপ, ডাবের পানি, ডাল, এবং ফলের রস।
    • শরীর হাইড্রেটেড রাখে এবং শক্তি বাড়ায়।
  2. ফলমূল:
    • পেঁপে, আপেল, কলা, এবং কমলা।
    • ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  3. সবজি:
    • পালং শাক, ব্রকলি, এবং লাউ।
    • ত্বকের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
  4. হালকা খাবার:
    • ওটস, খিচুড়ি, এবং সুপ।
    • সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর।
  5. দুধ এবং দই:
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর ঠান্ডা রাখে।
  6. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
    • ডিম, মুরগির মাংস, এবং মাছ।
    • ত্বক পুনরুদ্ধার এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।

জলবসন্ত রোগীদের জন্য কি খাবে না (What to Avoid for Chickenpox Patients):

  1. মসলাযুক্ত খাবার:
    • ঝাল এবং তেলেভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
    • এটি ফোস্কার চুলকানি বাড়াতে পারে।
  2. অ্যালকোহল:
    • এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে।
  3. কফি এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস:
    • ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে।
  4. অম্লীয় বা টকজাতীয় খাবার:
    • লেবু বা টক ফল ফোস্কার জ্বালা বাড়াতে পারে।
  5. সুগার সমৃদ্ধ খাবার:
    • চিনি সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে।
  6. জাঙ্ক ফুড:
    • পুষ্টি কম এবং হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

জলবসন্ত রোগের জন্য ব্যায়াম ও থেরাপি Exercise and therapy for Chickenpox

জলবসন্ত রোগের সময় শরীরকে আরাম এবং পুনরুদ্ধার করতে হালকা ব্যায়াম এবং থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। যদিও জলবসন্তের সময় ভারী ব্যায়াম এড়ানো উচিত, তবে কিছু হালকা শারীরিক কার্যকলাপ এবং থেরাপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

জলবসন্ত রোগের জন্য ব্যায়াম (Exercises for Chickenpox Patients):

  1. শ্বাস প্রশ্বাস ব্যায়াম (Breathing Exercises):
    • পদ্ধতি:
      • নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন।
      • প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট করুন।
    • উপকারিতা:
      • মানসিক চাপ কমায় এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।
  2. ইয়োগা স্ট্রেচিং (Light Yoga Stretches):
    • উপায়:
      • প্রজাপতি আসন, তাড়াসন বা সহজ আসন অনুশীলন করুন।
      • এটি সহজ এবং ক্লান্তিকর নয়।
    • উপকারিতা:
      • শরীরকে রিলাক্স করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
  3. পায়ের আঙ্গুলের ব্যায়াম (Toe and Foot Exercises):
    • পদ্ধতি:
      • পায়ের আঙ্গুল এবং গোড়ালির হালকা মোচড় ও স্ট্রেচ করুন।
    • উপকারিতা:
      • শরীরে রক্ত প্রবাহ বজায় রাখে এবং ফোলাভাব কমায়।
  4. কুঁচকির ব্যায়াম (Gentle Neck and Shoulder Rolls):
    • পদ্ধতি:
      • ঘাড় ও কাঁধ ধীরে ধীরে ঘোরান।
      • প্রতিদিন ৫ মিনিট অনুশীলন করুন।
    • উপকারিতা:
      • মাংসপেশি শিথিল করে এবং ব্যথা কমায়।
  5. মেডিটেশন:
    • পদ্ধতি:
      • একটি শান্ত স্থানে বসুন এবং ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ রেখে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করুন।
    • উপকারিতা:
      • মানসিক প্রশান্তি বাড়ায় এবং রোগ সেরে উঠতে সাহায্য করে।

জলবসন্ত রোগের জন্য থেরাপি (Therapies for Chickenpox Patients):

  1. ঠান্ডা কমপ্রেস থেরাপি (Cold Compress Therapy):
    • পদ্ধতি:
      • একটি পরিষ্কার তোয়ালে ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে চাপ দিন।
    • উপকারিতা:
      • চুলকানি এবং জ্বালাভাব কমায়।
  2. ওটমিল স্নান (Oatmeal Bath):
    • পদ্ধতি:
      • গরম পানিতে দুই কাপ ওটমিল মিশিয়ে স্নান করুন।
    • উপকারিতা:
      • ত্বক শীতল করে এবং প্রদাহ কমায়।
  3. অ্যারোমাথেরাপি:
    • পদ্ধতি:
      • ল্যাভেন্ডার বা চন্দনের তেল ডিফিউজারে ব্যবহার করুন।
    • উপকারিতা:
      • মানসিক চাপ কমায় এবং ঘুম উন্নত করে।
  4. ক্যালামাইন লোশন থেরাপি (Calamine Lotion Therapy):
    • পদ্ধতি:
      • আক্রান্ত স্থানে ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করুন।
    • উপকারিতা:
      • চুলকানি কমায় এবং ত্বকের আরাম দেয়।
  5. হালকা ম্যাসাজ (Gentle Massage):
    • পদ্ধতি:
      • নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।
    • উপকারিতা:
      • ত্বক আর্দ্র রাখে এবং ফোস্কার কারণে হওয়া শুষ্কতা কমায়।

সতর্কতা:

  1. ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন:
    • রোগীর শারীরিক দুর্বলতার কারণে।
  2. চুলকানো থেকে বিরত থাকুন:
    • এটি ফোস্কার ক্ষতি করতে পারে।
  3. পরিষ্কার এবং হাইজিন বজায় রাখুন।

জলবসন্ত রোগের এলোপ্যাথি চিকিৎসা Allopathic treatment for Chickenpox

জলবসন্ত একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসের কারণে হয়। এলোপ্যাথি চিকিৎসা এই রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও জলবসন্ত সাধারণত স্বাভাবিক চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়, তবে গুরুতর বা ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে এলোপ্যাথি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

জলবসন্তের জন্য এলোপ্যাথি চিকিৎসার ধাপসমূহ:

  1. অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ:
    • অ্যাসাইক্লোভির (Acyclovir):
      • ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর।
      • রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এই ওষুধ ব্যবহারে ফোস্কার সংখ্যা কমে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়।
    • ভ্যালাসাইক্লোভির (Valacyclovir):
      • এটি গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
  2. ব্যথা এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণে ওষুধ:
    • প্যারাসিটামল (Paracetamol):
      • জ্বর এবং ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
    • আইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলুন:
      • এটি ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এড়ানো উচিত।
  3. চুলকানি কমানোর জন্য ওষুধ:
    • অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamines):
      • যেমন ডাইফেনহাইড্রামিন (Diphenhydramine)।
      • চুলকানি কমায় এবং রোগীকে আরাম দেয়।
  4. স্কিন কেয়ার পণ্য:
    • ক্যালামাইন লোশন (Calamine Lotion):
      • ত্বকের চুলকানি কমায় এবং আরাম দেয়।
    • ওটমিল বাথ:
      • ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  5. ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগীর জন্য বিশেষ চিকিৎসা:
    • ইমিউনোগ্লোবুলিন ইনজেকশন:
      • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য প্রয়োগ করা হয়।
      • এটি ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
  6. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
    • ভেরিসেলা টিকা:
      • যাদের জলবসন্ত হয়নি, তাদের এই টিকা সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।

এলোপ্যাথি চিকিৎসার সুবিধা:

  1. দ্রুত আরোগ্য লাভ।
  2. জটিলতা যেমন নিউমোনিয়া বা এনসেফালাইটিস প্রতিরোধ।
  3. রোগীর আরামের জন্য লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ।

সতর্কতা:

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।
  2. শিশুরা বা গর্ভবতী নারীরা সংক্রমিত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  3. আইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ত্বকের সংক্রমণ বাড়াতে পারে।

জলবসন্ত রোগের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা Homeopathic treatment for Chickenpox

জলবসন্ত একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রাকৃতিক উপায়ে রোগীর আরোগ্য লাভ দ্রুত করতে এবং লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। হোমিওপ্যাথি ওষুধ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।

জলবসন্তের জন্য ব্যবহৃত প্রধান হোমিওপ্যাথি ওষুধসমূহ (Homeopathic Remedies for Chickenpox):

  1. Rhus Toxicodendron (রস টক্স):
    • ব্যবহার: চুলকানি এবং ফোস্কা থেকে আরাম পেতে।
    • উপকারিতা: ফোস্কার জ্বালা এবং ত্বকের লালভাব কমায়।
  2. Antimonium Tart (অ্যান্টিমোনিয়াম টার্ট):
    • ব্যবহার: ফোস্কাগুলো ভরে গেলে এবং ফাটতে শুরু করলে।
    • উপকারিতা: ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
  3. Sulphur (সালফার):
    • ব্যবহার: তীব্র চুলকানি এবং ফোস্কার জ্বালা কমাতে।
    • উপকারিতা: ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
  4. Pulsatilla (পালসাটিলা):
    • ব্যবহার: হালকা জ্বর এবং ক্লান্তি দূর করতে।
    • উপকারিতা: রোগীর মানসিক প্রশান্তি আনে এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
  5. Belladonna (বেলাডোনা):
    • ব্যবহার: উচ্চ জ্বর এবং তীব্র লালভাবের জন্য।
    • উপকারিতা: ত্বকের জ্বালা এবং জ্বর কমাতে কার্যকর।
  6. Mercurius Solubilis (মারকিউরিয়াস সলিউবিলিস):
    • ব্যবহার: ফোস্কায় পুঁজ থাকলে এবং গলায় ব্যথা হলে।
    • উপকারিতা: সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং গলার ব্যথা কমাতে সহায়ক।
  7. Aconite (অ্যাকোনাইট):
    • ব্যবহার: রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত আরোগ্যের জন্য।
    • উপকারিতা: জ্বর এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উপকারিতা (Benefits of Homeopathic Treatment):

  1. প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ।
  2. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
  3. রোগীর ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
  4. চুলকানি, জ্বর, এবং ফোস্কার জ্বালা দ্রুত কমায়।

সতর্কতা:

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না।
  2. নিয়মিত ডোজ মেনে চলুন।
  3. যদি অবস্থা খারাপ হয়, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

জলবসন্ত রোগের ভেষজ চিকিৎসা Herbal treatment for Chickenpox

জলবসন্তের জন্য ভেষজ চিকিৎসা প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ পদ্ধতি। এটি ফোস্কার জ্বালা কমাতে, ত্বকের আরাম নিশ্চিত করতে এবং রোগের দ্রুত আরোগ্যে সহায়ক। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলো দূর করতে সাহায্য করে।

জলবসন্তের জন্য কার্যকর ভেষজ উপাদানসমূহ (Effective Herbal Remedies for Chickenpox):

  1. নিম পাতা (Neem Leaves):
    • ব্যবহার:
      • কয়েকটি নিম পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি দিয়ে স্নান করুন।
      • ফোস্কার উপর নিম পাতা গুঁড়ো লাগানো যেতে পারে।
    • উপকারিতা:
      • অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ রয়েছে যা ফোস্কার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা রাখে।
  2. তুলসী পাতা (Basil Leaves):
    • ব্যবহার:
      • তুলসী পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করুন।
    • উপকারিতা:
      • শরীরের প্রদাহ কমায় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
  3. ওটমিল (Oatmeal):
    • ব্যবহার:
      • গরম পানিতে ওটমিল মিশিয়ে স্নান করুন।
    • উপকারিতা:
      • ত্বকের চুলকানি এবং জ্বালা দূর করতে সাহায্য করে।
  4. আলো ভেরা (Aloe Vera):
    • ব্যবহার:
      • তাজা অ্যালোভেরা জেল ফোস্কার উপর লাগান।
    • উপকারিতা:
      • ত্বককে ঠান্ডা রাখে এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
  5. মধু (Honey):
    • ব্যবহার:
      • সরাসরি মধু ফোস্কার উপর লাগান।
    • উপকারিতা:
      • ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
  6. লেমন বাম (Lemon Balm):
    • ব্যবহার:
      • লেমন বাম চা পান করুন বা ফোস্কার উপর সরাসরি প্রয়োগ করুন।
    • উপকারিতা:
      • অ্যান্টিভাইরাল গুণাগুণ রয়েছে যা ফোস্কার আরোগ্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
  7. চন্দন গুঁড়ো (Sandalwood Powder):
    • ব্যবহার:
      • চন্দন গুঁড়ো এবং গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।
    • উপকারিতা:
      • ত্বক শীতল করে এবং প্রদাহ কমায়।
  8. পুদিনা পাতা (Mint Leaves):
    • ব্যবহার:
      • পুদিনা পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করুন।
    • উপকারিতা:
      • শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং চুলকানি কমায়।

ভেষজ চিকিৎসার উপকারিতা (Benefits of Herbal Treatment):

  1. প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ।
  2. ত্বকের প্রদাহ এবং চুলকানি কমায়।
  3. শরীরকে ঠান্ডা এবং আরামদায়ক রাখে।
  4. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সতর্কতা:

  1. অ্যালার্জি পরীক্ষা করুন: নতুন কোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করুন।
  2. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি জ্বর বা সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।
  3. চুলকানো এড়িয়ে চলুন: এটি ফোস্কার ক্ষতি করতে পারে।

জলবসন্ত রোগীদের রান্নার উপকরণ ও পরিবেশ কেমন হবে? What will be the cooking materials and environment in patients with Chickenpox?

জলবসন্ত রোগীদের খাবার অবশ্যই সহজপাচ্য, পুষ্টিকর এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হওয়া উচিত। তাছাড়া, রান্নার পরিবেশ এবং পদ্ধতি এমন হতে হবে যা রোগীর সংক্রমণ এড়াতে এবং দ্রুত আরোগ্যে সহায়তা করে।

রান্নার উপকরণ (Cooking Ingredients for Chickenpox Patients):

  1. প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর খাবার:
    • তাজা সবজি: যেমন ব্রকলি, পালং শাক, লাউ।
    • ফলমূল: যেমন কলা, আপেল, পেঁপে, এবং জাম।
    • স্বাস্থ্যকর শস্য: ব্রাউন রাইস, ওটস।
  2. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
    • মুরগির স্যুপ, ডাল, এবং ডিম।
    • মাছের পাতলা ঝোল।
  3. তরল জাতীয় খাবার:
    • ডাবের পানি, লেবুর শরবত, গরম স্যুপ।
    • ফলের রস (চিনি ছাড়া)।
  4. প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান:
    • আদা, রসুন, এবং হলুদ।
    • প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
  5. হালকা খাবার:
    • সেদ্ধ খিচুড়ি, নরম রুটি বা ব্রেড।

রান্নার পরিবেশ (Cooking Environment for Chickenpox Patients):

  1. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
    • রান্নার আগে এবং পরে হাত ধুয়ে নিন।
    • ব্যবহৃত পাত্র এবং সরঞ্জাম পরিষ্কার রাখুন।
  2. নিম্নতাপমাত্রায় রান্না করুন:
    • খাদ্য সহজপাচ্য রাখতে সেদ্ধ বা স্টিম করা খাবার প্রস্তুত করুন।
  3. গরম এবং সংক্রমণমুক্ত পরিবেশ:
    • রান্নাঘর ভালোভাবে বায়ুচলাচলযুক্ত এবং সংক্রমণমুক্ত হওয়া উচিত।
  4. কম মসলা ব্যবহার করুন:
    • ঝাল এবং অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  5. ফ্রেশ এবং রাসায়নিকমুক্ত উপাদান ব্যবহার করুন:
    • অর্গানিক বা তাজা উপাদান ব্যবহার করুন।

কী এড়িয়ে চলবেন (What to Avoid):

  1. প্রক্রিয়াজাত খাবার:
    • চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, এবং সফট ড্রিঙ্কস।
  2. অতিরিক্ত তেল বা ঝাল:
    • ভাজা খাবার এবং ঝাল মসলা।
  3. চিনি এবং মিষ্টি:
    • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে।

জলবসন্ত রোগীদের স্কিন ক্রিম, লোশন, তেল ও সাবান কেমন হবে? How about skin creams, lotions, oils and soaps for Chickenpox patients?

জলবসন্তের সময় রোগীর ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়ে যায় এবং ফুসকুড়ি, চুলকানি ও জ্বালা অনুভূত হয়। তাই সঠিক ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। এমন পণ্য ব্যবহার করা উচিত যা ত্বককে শীতল রাখে, চুলকানি কমায় এবং ত্বক সুস্থ হতে সাহায্য করে।

স্কিন ক্রিম (Skin Cream):

  1. ক্যালামাইন লোশন (Calamine Lotion):
    • ত্বকের চুলকানি কমাতে এবং ফুসকুড়ির জ্বালা প্রশমিত করতে ব্যবহার করা হয়।
    • এটি শীতলকারী প্রভাব প্রদান করে।
    • দিনে ২-৩ বার আক্রান্ত জায়গায় প্রয়োগ করুন।
  2. অ্যালোভেরা জেল (Aloe Vera Gel):
    • প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ এই জেল ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং দ্রুত আরোগ্য পেতে সাহায্য করে।
  3. হাইড্রোকরটিসন ক্রিম (Hydrocortisone Cream):
    • ডাক্তারদের পরামর্শে এটি চুলকানি ও লালচে ভাব কমানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  4. ওটমিল বেজড ক্রিম (Oatmeal-Based Cream):
    • ত্বকের শুষ্কতা কমায় এবং আরাম প্রদান করে।

লোশন (Lotion):

  1. ময়েশ্চারাইজিং লোশন:
    • অ্যালকোহল-মুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
    • এটি ত্বকের শুষ্কতা কমায় এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
  2. চন্দন বা মধু সমৃদ্ধ লোশন:
    • ত্বক শীতল রাখতে এবং আরামদায়ক প্রভাব দিতে সহায়ক।

তেল (Oil):

  1. নারিকেল তেল (Coconut Oil):
    • সংক্রমণ রোধ এবং ত্বক নরম রাখতে সহায়ক।
    • হালকাভাবে আক্রান্ত অংশে লাগান।
  2. টি-ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil):
    • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের প্রদাহ কমায়।
    • এটি সরাসরি না লাগিয়ে অন্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
  3. ল্যাভেন্ডার তেল (Lavender Oil):
    • ফুসকুড়ি ও ত্বকের জ্বালা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।

সাবান (Soap):

  1. গ্লিসারিন সাবান:
    • ত্বক শুষ্ক না করে পরিষ্কার রাখে।
    • মৃদু এবং কোমল সাবান ব্যবহার করুন।
  2. অ্যান্টিসেপটিক সাবান:
    • সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে।
  3. ওটমিল সাবান:
    • ত্বকের চুলকানি ও জ্বালা কমায়।
  4. সালফার-যুক্ত সাবান (Sulfur Soap):
    • সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকর, তবে এটি ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

জলবসন্ত রোগীদের অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক ও অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা কেমন হবে ? What will be Aromatherapy cosmetic and aromatherapy treatment for Chickenpox patients?

জলবসন্তের সময় রোগীর ত্বক খুব সংবেদনশীল এবং চুলকানিযুক্ত হয়ে থাকে। তাই ত্বকের যত্ন এবং রোগীকে শিথিল করার জন্য অ্যারোমাথেরাপি একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। প্রাকৃতিক এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করে ত্বকের জ্বালা প্রশমিত করা এবং মানসিকভাবে রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করা হয়।

জলবসন্ত রোগীদের জন্য অ্যারোমাথেরাপি কসমেটিক (Aromatherapy Cosmetics for Chickenpox Patients):

  1. অ্যারোমাথেরাপি স্কিন স্প্রে:
    • উপাদান: ল্যাভেন্ডার তেল, টি-ট্রি তেল, এবং গোলাপজল।
    • ব্যবহার: ফুসকুড়ি এবং ত্বকের চুলকানি প্রশমিত করতে স্প্রে ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে শীতল অনুভূতি দেয়।
  2. অ্যারোমাথেরাপি বডি অয়েল:
    • উপাদান: নারিকেল তেল বা জোজোবা তেলে মিশ্রিত টি-ট্রি তেল এবং ল্যাভেন্ডার তেল।
    • ব্যবহার: হালকাভাবে আক্রান্ত ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এটি চুলকানি কমায় এবং ত্বক শীতল রাখে।
  3. অ্যারোমাথেরাপি স্নান লোশন:
    • উপাদান: ওটমিল পাউডার, ল্যাভেন্ডার তেল, এবং ক্যামোমাইল তেল।
    • ব্যবহার: এই মিশ্রণটি স্নানের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি চুলকানি কমায় এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে।
  4. অ্যারোমাথেরাপি ময়েশ্চারাইজার:
    • উপাদান: শিয়া বাটার, ল্যাভেন্ডার তেল, এবং অ্যালোভেরা জেল।
    • ব্যবহার: ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে হালকাভাবে প্রয়োগ করুন।

জলবসন্ত রোগীদের জন্য অ্যারোমাথেরাপি চিকিৎসা (Aromatherapy Treatment for Chickenpox Patients):

  1. ল্যাভেন্ডার তেল থেরাপি:
    • গুণাগুণ: ল্যাভেন্ডার তেল ত্বক শীতল করতে এবং চুলকানি কমাতে কার্যকর।
    • ব্যবহার:
      • স্নানের পানিতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল যোগ করুন।
      • একটি ডিফিউজারে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করে ঘরে শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করুন।
  2. টি-ট্রি তেল থেরাপি:
    • গুণাগুণ: এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা ত্বকের সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
    • ব্যবহার: নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গায় প্রয়োগ করুন।
  3. ক্যামোমাইল তেল থেরাপি:
    • গুণাগুণ: ক্যামোমাইল তেল ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং আরামদায়ক প্রভাব দেয়।
    • ব্যবহার: স্নানের পানিতে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে বা ম্যাসাজ অয়েল হিসেবে ব্যবহার করুন।
  4. ইউক্যালিপটাস তেল থেরাপি:
    • গুণাগুণ: এটি ত্বকের শীতলতা বজায় রাখে এবং চুলকানি কমাতে সহায়তা করে।
    • ব্যবহার: একটি ডিফিউজারে ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করুন বা স্নানের পানিতে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন।
  5. অ্যারোমাথেরাপি ধ্যান ও শিথিলতা:
    • ল্যাভেন্ডার বা টি-ট্রি তেলের মাধ্যমে অ্যারোমাথেরাপি ধ্যান রোগীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
    • রোগীর ঘরে ডিফিউজারে এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করুন।

জলবসন্ত রোগের কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালের নাম ও ওয়েব লিংক A few famous Chickenpox-related journals and web links

জলবসন্ত বা চিকেনপক্স রোগের বিষয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য এবং প্রবন্ধ পাওয়া যায় অনেক মেডিক্যাল জার্নালে। এই জার্নালগুলো রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করে।

১. “The Journal of Infectious Diseases”

  • বিষয়: জলবসন্ত এবং Varicella-Zoster ভাইরাস নিয়ে গবেষণাপত্র।
  • লিংক: https://academic.oup.com/jid

২. “Clinical Infectious Diseases”

  • বিষয়: জলবসন্ত রোগের এপিডেমিওলজি এবং চিকিৎসা পদ্ধতি।
  • লিংক: https://academic.oup.com/cid

৩. “Vaccine”

  • বিষয়: ভ্যারিসেলা ভ্যাকসিন এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কিত গবেষণা।
  • লিংক: https://www.journals.elsevier.com/vaccine

৪. “The Lancet Infectious Diseases”

৫. “Pediatric Infectious Disease Journal”

উপসংহার Conclusion

জলবসন্ত একটি সংক্রামক রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Diseases Category

রোগ ক্যাটাগরি

Cancer, Tumors & Cysts ক্যান্সার, টিউমার ও সিস্ট রোগ
Dermatology চর্ম, নখ ও চুলের রোগ
Obs & Gynecology গাইনী, প্রসূতি ও স্তনের রোগ
ENT & Pneumology নাক, কান, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ
Psychology মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগ চিকিৎসা
Rheumatology হাড়, পেশী ও জয়েন্টের রোগ
Pediatrics নবজাতক ও শিশু রোগ
Neurology ব্রেইন, স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভের রোগ
Sexology যৌন শক্তি ও যৌন বাহিত রোগ
Urology কিডনি, মুত্র, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড ও পুরুষ জননাঙ্গের রোগ
Gastroenterology পাকস্থলী ও হজম সংক্রান্ত রোগ
Coloproctology মলদ্বার, পায়ুপথ ও কোলনের রোগ
Hepatology লিভার ও পিত্তের রোগ
Ophthalmology চোখ, দৃষ্টি শক্তি ও চোখের পাতার রোগ
Acute & Emergency জ্বর, সংক্রামক ও ইমার্জেন্সি রোগ
Diabetes & Endocrinology ডায়াবেটিস ও হরমোন জনিত রোগ
Oral & Dental দাঁত ও মুখের রোগ
Cardiology হার্টের রোগ
Hematology রক্ত, বোনম্যারু, প্লিহা ও লিম্ফ নোডের রোগ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *